সেই লেডিবাইকারের মামলার ফাঁদ থেকে রক্ষা পেল একটি পরিবার

খন্দকার শাহিন, পিবিএ, নরসিংদী: নরসিংদীতে প্রতারণা করে বিয়ে ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে মোটা অংঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ বিফলে গেল সুর্বণা নাহার সাথী নামে এক লেডিবাইকারের।

সাথি তার স্বামী মো: শরিফুল ইসলাম সানি, শাশুড়ী সেলিনা হক, ভাসুর মো: সেলিম ও শ্বশুড় মো: সামসুল হক এর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে তার স্বামী,ভাসুর প্রতিবেশী আকরাম, রিপনকে আসামীকরে আরেকটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

দীর্ঘ তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে ডাক্তারি পরিক্ষা ও অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় সাথির দায়েরকৃত দুটি মামলা থেকেই আসামীগণদের অব্যাহতি দেন নরসিংদীর বিজ্ঞ আদালত।


মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে নরসিংদী সদর উপজেলার নুরালাপুর ইউনিয়নের নওয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে ভুক্তভোগী সেলিনা হক এর কাছ থেকে জনা যায়, সম্প্রতি রাজধানীতে চষে বেড়ানো প্রতারক চক্রের সদস্য লিডিবাইকার খ্যাত সুবর্ণা নাহার সাথি প্রথম বিয়ের তথ্য গোপন করে শফিকুল ইসলাম সানিকে বিয়ে করে। পরবর্তীতে নানা সময়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সানির পরিবারের সাথে কলহ শুরু হয়। এর জেরে তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও গণধর্ষণের অভিযোগ এনে মাধবদী থানায় মামলা করেন সাথি। প্রথম মামলাটি প্রমাণ করতে না পাড়ায় আদালত সানি ও তাদের পরিবারকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে।

পরে সানির সাথে ঘর-সংসার করার কৌশল অলম্বন করে তাদের বাড়িতে আসে। এ খবর জানাজানি হলে এলাকার উৎসুখ জনতা তাদের বাড়িতে ভিড় জমায়। এ বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানানো হয়। পরে সাথীর বাবা-মাকে নিয়ে আসতে বলে চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। কিন্তু সে তা না করে উল্টো নারী নির্যাতন ও গণধর্ষণ সাজিয়ে তার চাকরিজীবী বড় ছেলেসহ মোট চারজনকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করে। এ মামলার পর থেকে পুলিশের ভয়ে তার ছেলেরা বাড়ি ছেড়ে বহুদিন নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। প্রতারণাকারী এ নারী নিঃস্ব করে দিতে চাইছিলো তাদের সংসার।

এ বিষয়ে প্রশাসনের নিকট সঠিক তদন্ত ও সাংবাদিক সম্মেলন করে বিচারের দাবি জানানো হয়। অবশেষে এই প্রতরণাকারী লেডিবাইকারের মিথ্যা মামলার আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন সবাই।

আদালত সূত্র জানায়, ডা: কামরুন নাহার লিপী ধর্ষণ মামলায় বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন যে, ভিকটিম, সুর্বণা নাহার সাথীকে পরীক্ষাকালে তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনে দেখা যায় যে, তিনি একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছেন; ভিকটিমের ভাষ্যমতে ঘটনার পরীক্ষার প্রতিবেদন ফর্মে ৭ (সাত) নং অনুচ্ছেদ ভিকটিমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিপিবদ্ধ করার বিধান রয়েছে; সে মোতাবেক ভিকটিম যে বর্ণনা দিয়েছেন এবং বর্ণনাকালে ভিকটিম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ঐ সময় ভিকটিমের গণধর্ষণের প্রতিবাদে হাসপাতালে মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ে কতিপয় লোক জড়ো হয়। এই সকল বিবেচনায় ভিকটিমকে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়েছে মর্মে ডা: কামরুন নাহার লিপীর নিকট বদ্ধমুল ধারণা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগকারিনীর না-রাজী দরখাস্ত ডাক্তারী প্রতিবেদন সমর্থন না হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত নামঞ্জরি করে ও মামলাটির সাক্ষ্য দ্বারা বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় অভিযোগটি নাচক করেন।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের মেলিকেল অফিসার কামরুন নাহার লিপির পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অদক্ষতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আদেশের কপি সচীব, স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয় প্রেরণ ও সচীব আইন মন্ত্রাণালয়ে প্রেরণ করার আদেশ দেন নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল।

ফলে তদন্ত ও ডাক্তারী পরিক্ষা রিপোর্ট উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত মো: শরিফুল ইসলাম সানির সহ সবাইকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রধান করেন।

পিবিএ/খন্দকার শাহিন/জেডআই

আরও পড়ুন...