শুধু সমুদ্রে নয় রাজনীতিতেও ঝড় উঠেছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে শুধু সমুদ্রে ঝড় নয় রাজনীতিতেও ঝড় উঠেছে। অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই আপনাদের বাঁচার পথ। আমরা অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।

শনিবার (১৩ মে) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

৪৭ বছর পর জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এর মূল কারণ হলো জনগণের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা। একই কায়দায় তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে করেছিল। এভাবে নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তবে কোনো ধানাই-পানাই করে বা কেরিকাটা করে লাভ হবে না। ইনশাআল্লাহ, জনগণের বিজয় হবে।

আজ ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে অসংখ্য নেতাকর্মীর ঢল নেমেছিল। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি আদায় এবং গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরীর কর্মসূচি হলেও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন। একদিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়, বিজয়নগর, অন্যদিকে ফকিরাপুল ও আরামবাগ মোড় এবং আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বেলা আড়াইটার দিকে সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এই দেশে উচ্চ আদালত জামিন দেয় কিন্তু নিম্ন আদালত তা বাতিল করে দেয়। যেখানে কোনো ঘটনাই ঘটেনি, সেখানে ককটেল ফাটানোর মামলা দেওয়া হয়। এসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে- আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা। সেজন্যই আবারও গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের সমাবেশ। আজকে রিকশাওয়ালা সারাদিন পরিশ্রম করে বাসায় গিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না। কারণ নিত্যপণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। দিন আনে দিন খায় এমন লোকেরা আজকে অসহায়। এই সরকার শুধু দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের পকেট ভরছে। সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা কেটে বিদেশে পাচার করছে।

তিনি বলেন, এই সরকার তিনটি দেশ সফর করেছে। কিন্তু কোনো অর্জন নেই। সবার সঙ্গে মিটিংয়ে নির্বাচনের প্রসঙ্গটি এসেছে। কারণ বিদেশিরা দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন দেখতে চায়। দেশ-বিদেশে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তারা নির্বাচন করতে গেলে রুখে দেওয়া হবে। আমরা সত্যিকার অর্থেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় দেখতে চাই। এই দাবিতেই আমরা দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলন করছি। আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। ৩৯ লাখ মানুষকে আসামি করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি সবকিছু ধ্বংস করা হয়েছে। ’৭১ সালের মতো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মো. আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব মো. রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি মো. আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, শিরিন সুলাতানা, আব্দুল খালেক, সেলিমুজ্জামান সেলিম, অঙ্গসংগঠনের সাদেক আহমেদ খান, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এসএম জিলানী, হাসান জাফির তুহিন, সুলতানা আহম্মেদ, আনোয়ার হোসাইন, আবুল কালাম আজাদ, মো. আব্দুর রহিম, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

সভায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা নতুনভাবে শপথ নিতে চাই, দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র হত্যাকারী শেখ হাসিনাকে বিদায়ের জন্য ইস্পাত কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এই সরকারকে বিদায়ের পরই ইনশাআল্লাহ আমরা ২৭ দফার ভিত্তিতে রাষ্ট্রকে নতুনভাবে মেরামত করব। আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। এক কথায় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে হটানোর কোনো বিকল্প নেই।

মির্জা আব্বাস বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের যে সূচনা হলো তা অব্যাহত থাকবে এবং সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশের যে পরিস্থিতি তাতে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে মুখে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে; প্রকৃত পক্ষে তারা দেশের মানুষের বিপক্ষে কাজ করে। আজকে মানুষ বুঝে গেছে দেশের স্বাধীনতা তাদের কাছে নিরাপদ নয়। তারা আবারও অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে। কেউ স্বাধীনভাবে লিখতে ও বলতে পারেন না। এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে চলে যেতেই হবে।

আরও পড়ুন...