পিবিএ, ঢাকা: দেশের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এর শিক্ষার্থীরা তীব্র সেশনজটে পড়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়টির নাট্যকলা বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগে তীব্র সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, সান্ধ্যকালীন কোর্সে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়ায় নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা নিতে পারছেন না শিক্ষকরা। ফলে বাড়ছে সেশনজট।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেশনজট নামটি উঠে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকটি বিভাগ সেশনজট থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। সেশনজটে বেশি সমস্যায় ভুগছে জবির নাট্যকলা বিভাগ। এ বিভাগে শিক্ষক ও কর্মকর্তা সংকট থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা সেশন জটে ভুগছেন।
এছাড়াও বিভাগটিতে দীর্ঘদিন ধরে সেকশন অফিসার না থাকায় বিভাগের প্রশাসনিক কাজও শিক্ষকদের করতে হয়। নবীন শিক্ষকরা পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যাবলি ও প্রশাসনিক কাজে দক্ষ না হওয়ায় বিভাগটির একাডেমিক কার্যক্রম ধীর গতিতে চলছে।
নাট্যকলা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা দেড় বছর পিছিয়ে এখনো ৭ম সেমিস্টারে ক্লাস করছেন। ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এক বছর পিছিয়ে যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৫ম সেমিস্টারে ক্লাস করছেন।
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও ইতোমধ্যে ৬ মাস পিছিয়ে পড়েছে। এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ছয় মাস মেয়াদি সেমিস্টার শেষ করতে আট মাস সময় লাগছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সেমিস্টারের নির্ধারিত ক্রেডিট ক্লাস শেষ হলেও পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর কয়েকবার লিখিতভাবে জানানো হলেও সমস্যার সমাধান মেলেনি।
এছাড়া বিভাগটিতে ক্লাসরুম সংকটের কারণে এক ব্যাচের পরীক্ষা হলে অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এজন্যও শিক্ষার্থীরা বিভাগটির সেশনজটের ভোগান্তিতে পড়ছে।
সেশনজট নিয়ে নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান মোঃ কামাল উদ্দিন গণমাধ্যমে বলেন, ‘ভিসি স্যারের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আগামী মাস থেকে সকল ব্যাচের পরীক্ষা নিধার্রিত সময়ে নিয়ে সেশনজট কমিয়ে আনা হবে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগেও মাত্রাতিরিক্ত সেশন জট। এ বিভাগের ক্লাস পরীক্ষায় কোন ধরনের একাডেমিক রুটিন না মানার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকরা নিজেদের মত ক্লাস পরীক্ষা নেন। বিভাগটিতে সেমিস্টারের মিডটার্ম পরীক্ষায় সময় দিয়ে তিন থেকে চারবার সময় পেছানোর অভিযোগও আছে।
ফলে বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এক বছর জটে রয়েছে। এখনও মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারের ফল দেয়নি। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সাত মাস জটে রয়েছে। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও এক বছর জটে এখন স্নাতক ষষ্ঠ সেমিস্টারের ফল না দেওয়ায় ৭ম সেমিস্টার পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হচ্ছে না। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় চলমান অন্যান্য ব্যাচগুলোর সঙ্গে পিছিয়ে পড়ছেন প্রায় সাত মাস।
বিভাগটির প্রতি শিক্ষাবর্ষের ছয় মাস মেয়াদি এক সেমিস্টার শেষ করতে গড়ে আট মাস করে সময় লাগছে। কিন্তু বিভাগটির ২০১৭ সালে চালু হওয়া সান্ধ্যকালীন কোর্সে যথাসময়ে ক্লাস পরীক্ষা নেওয়া হয়। শিক্ষকরা সান্ধ্যকালীন কোর্সে এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন কোর্সে বেশি সময় দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নতুন চালু হওয়া ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগটির প্রথম ব্যাচ ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এক বছর ও ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রায় ৭ মাস পিছিয়ে ক্লাস করছেন। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ১ম সেমিস্টার ১১ মাসে শেষ করে সবেমাত্র ২য় সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা দেড় বছরের জটে রয়েছেন। তাদের এখনো মাস্টার্স ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হয়নি। বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রায় ৮ মাস পিছিয়ে ক্লাস করছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের এক বছরের জটে রয়েছে ফলে বিভাগটিতে মাস্টার্স পর্যায়ে একই সঙ্গে তিনটি ব্যাচের ক্লাস হচ্ছে।
এছাড়া, রসায়ন ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে দেড় বছর, ২০১৫-১৬ ছয় মাস, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ৬ মাস, পরিসংখ্যান ২০১৫-১৬ সেশনে ৪ মাস ও ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষেও ৬ মাস, আইন বিভাগ ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের যথাক্রমে ৬ ও ৮ মাস, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ১ বছর জটে মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারে, ইতিহাসের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ৬ মাসের জটে এখন মাস্টার্স ৭ম সেমিস্টারে এবং ফার্মেসি ও গণিত বিভাগের প্রায় সবকটি বিভাগেই ৬ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত পিছিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, সেশন জট সমস্যা সমাধান করতে সকল অনুষদের বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষার সময় ঘোষণা করে তারা এ সমস্যার সমাধান করবেন।
পিবিএ/ইএইচকে