সৈয়দপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

পিবিএ,সৈয়দপুর,নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে। যে কোন সময় দূর্ঘটনার আশংকা নিয়েই ক্লাস করছে শিশু শিক্ষার্থীরা। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষকরাও বাধ্য হয়ে জরাজীর্ন ওই ভবনেই ক্লাস নিচ্ছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৈয়দপুর পৌর এলাকার ১৫ নং ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিস্ত্রীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র দ্বিতল ভবনটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনের ছাদে বড় বড় কয়েকটি ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে পানি পড়ে ক্লাসরুমে।

নীলফামারীর সৈয়দপুরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে।
জরাজীর্ণ স্কুল ভবন

এসময় পাঠদান বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের অন্য পাশের একতলা ভবনে অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সাথে বসতে হয়। দেয়ালের ও ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খুলে পড়েছে। আবার কোথাও কোথাও পলেস্তারা আলগা হয়ে ঝুলে রয়েছে। যে কোন সময় সেগুলোও খসে পড়ে শিক্ষার্থীরা আহত হতে পারে। ভবনের মূল বীমগুলোর পলেস্তারা খসে পড়ে রড ও কংক্রিট বেরিয়ে পড়েছে।

এই অবস্থার মধ্যেই নিয়মিত ক্লাস করা হচ্ছে ওই ভবনে। এর ফলে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অভিভাবকরাও ভবনটির অবস্থার প্রেক্ষিতে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আশংকায় দিন কাটান। ইতোপূর্বে পলেস্তারা খসে পড়ে কয়েক বার দূর্ঘটনার শিকার হয়েছে শিক্ষার্থীরা। ভবনটি এতটাই নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে যে, সামান্য ঝড়ো হাওয়া হলেই ভবনটি দুলে উঠে।

একটু তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ভবনটি যে কোন মূহুর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ১৯৮৭ সালে স্থাপন করা হয় এই দ্বিতল ভবনটি। তারপর মাঝে একবার ঠিকাদারের মাধ্যমে সংস্কার করা হলেও তা ছিল অত্যন্ত নিম্মমানের।

জরাজীর্ণ স্কুল ভবন

এ কারণে এখন ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই এটি পূণ:নির্মাণ করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। শিক্ষা বিভাগ ভবনটিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করলেও বিকল্প ব্যবস্থা বা নতুন ভবন নির্মাণের কোন উদ্যোগ না নেয়ায় জীবনহানির আশংকার মধ্যেও ক্লাস চলছে ওই ভবনে।

ভবনটি কোন কারণে ধ্বসে পড়লে শুধু ভবনে ক্লাস করা শিক্ষার্থীরাই নয় বরং পুরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৪১ জন শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও প্রতিষ্ঠানের পাশের আবাসিক ভবনে বসবাসকারীরাও দূর্ঘটনার শিকার হবেন।এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী জানায়, ক্লাস করতে ভয় লাগে। তারপরও বাধ্য হয়েই এখানে ক্লাস করতে হচ্ছে। পলেস্তারা খসে পড়ে অনেকেই আহত হয়েছে। দূর্ঘটনা ঘটলে তা রানা প্লাজার মত ভয়াবহ হতে পারে।

জরাজীর্ণ স্কুল ভবন

কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, স্কুলের ওই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্বেও শিক্ষকরা ওই ভবনেই ক্লাস নিচ্ছেন। সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে খুবই আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। কখন যে কি ঘটে যায়। বিশেষ করে ঝড়-বৃষ্টির দিনে প্রতি মূহূর্ত আশংকায় কাটে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা মোছা. হালিমা খাতুন বলেন, ভবনটিতে ক্লাস করা নিয়ে আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বাধ্য হয়েই শিশু শিক্ষার্থীদের সেখানে ক্লাস করাতে হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও দীর্ঘদিন হলো এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে অত্যন্ত নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে এই ভবনে পাঠদান।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাহান মন্ডল জানান, বিদ্যালয়টির ভবনটি আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তা চিহ্নিত করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে শিক্ষা বিভাগকে জানানো হবে।

পিবিএ/জেএইচ/আরআই

আরও পড়ুন...