সোনার ধানে ব্লাস্ট রোগ, দিশেহারা কৃষক

আর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক। শেষ হবে অপেক্ষার পালা। শুরু হবে বোরো ধান মাড়াই মওসুম। সবুজ বর্ণ ফিকে হয়ে সোনালী বর্ণ ধারন করতে শুরু করেছে ক্ষেতের ধান। ধানে ভরবে গোলা
ব্লাস্ট নামক ছত্রাকে আক্রান্ত সখীপুরের শত শত একর জমির ধান মরে যাচ্ছে।

পিবিএ, টাঙ্গাইল: আর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক। শেষ হবে অপেক্ষার পালা। শুরু হবে বোরো ধান মাড়াই মওসুম। সবুজ বর্ণ ফিকে হয়ে সোনালী বর্ণ ধারন করতে শুরু করেছে ক্ষেতের ধান। ধানে ভরবে গোলা। সোনার ধানের সোনার হাসিতে ভরে উঠবে চাষীদের মন। কিন্তু সখীপুরের চাষীদের এ হাসি এখন ফিঁকে হয়ে গেছে।

সোনার ধানে লেগেছে ব্লাস্ট রোগ। মাঠের পর মাঠ, ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় পাকা ধান ক্ষেতে হঠাৎ করে ব্লাস্টের আক্রমণ নিরুপায় করে তুলছে চাষীদের। দেখে মনে হবে পেকে গেছে ক্ষেতের ধান। না, এ ধান পাকেনি। ব্লাস্ট আক্রমনে অকালেই এ রকম সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে এ জমির ধান। ধানের শীষে কোন ধান নেই। আছে চিটা। ধান কেটে গরু-মহিষের খাবার করছেন চাষীরা। পরিশ্রমের ফসলের এ হাল দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক।

সরজমিন উপজেলার কীর্ত্তণখোলা, ধুমখালী, গজারিয়া, বোয়ালী, নলুয়া, কচুয়া, নয়া কচুয়া,কালিয়া, দেবরাজ, বেলতলী, পাথারপুর, ইছাদিঘী, কালিদাস, বড়চওনা, ছোটমৗশা, বেতুয়া, কালিয়ান বহেড়াতৈলসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। কৃষকের চোখের সামনেই ক্ষেতের সোনার ফসলগুলো ধীরে ধীরে পুড়ে যাচ্ছে। এ দৃশ্য একজন কৃষকের কাছে বড়ই নির্মম।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। রোপণের কিছুদিন পরেই কিছু ক্ষেতে ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দেয়। এ পর্যন্ত উপজেলা তিনটি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক একর জমি ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে। কৃষি অফিস এ রোগে আক্রান্ত এলাকায় ব্যাপক প্রচারণাসহ কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

কৃষি অফিসের তত্বাবধানে ও পরামর্শ ও বিভিন্ন রকম কীটনাশক ব্যবহার করেও কোন কাজে আসছে না। আর মাত্র কয়েকদিন পর কৃষক পাঁকা ধান কেটে ঘরে তুলবে ঠিক তার আগ মুহুর্তে এসে ওই ফসলে ব্লাস্টের আক্রমণে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। ধানের শীষ বের হওয়ার তিন-চারদিন পরই শীষগুলো মরে যাচ্ছে। ধানের পেটে কোনো চাল নেই। মনে হয় ধানগুলো পেকে গেছে। কাছে গিয়ে দেখা যায় শীষের সবক’টি ধানই চিটে।

এতে কোন চাল নেই। এ রোগ যদি নিয়ন্তন করা না যায় তাহলে ইরি -বোরো উৎপাদন লক্ষমাত্রা অর্জন করা কোন ভাবেই সম্ভব হবে না। কৃষি অফিস আরো জানায়, সাধারণত ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ জাতের ধানে এ রোগটি বেশি আক্রমণ করেছে।

এ বিষয়ে একাধিক কৃষক ও স্থানীয় সার-বীজ ডিলারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ধানের চারা রোপণের কিছুদিন পর সবুজ পাতায় কালো দাগ দেখা দেয় এবং ধানের পাতা পচে যেতে থাকে। ওই সময় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ট্রাইসাইক্লাজোল উপাদানের ট্রুপার-৭৫ ডব্লিউ পি, সেলট্রিমা জাতীয় বিভিন্ন ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয়। প্রথম দিকে কিছুটা কমলেও পরে আবারও আক্রমনের শিকার হন চাষিরা। কীটনাশক স্প্রে করেও কোন সুফল পাচ্ছেন না বলে জানান কৃষকরা।
উপজেলার গজারিয়া গ্রামের কৃষক হুরমুজ আলী বলেন, ‘আমার ধানক্ষেতে তিন চার বার বিষ দেওয়ার পরও কোন কাজ হইলো না । আমার এক একর জমির ধানের হিনজাগুলো একেবারে মইরা গেছে। এহন আমরা পরিবার নিয়ে কিবা করুম।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ট্রাইসাইক্লাজোল উপাদানের ট্রুপার-৭৫ ডব্লিউ পি, সেলট্রিমা জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করার পর নতুন করে এ রোগ আক্রমণ করার কথা নয়। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রন করা যাছে না। আমার কৃষি বিভাগের সমস্ত কর্মকর্তা কর্মচারির সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছে এবং পরামর্শ প্রদান করছে।

কিন্তু খুব বেশী ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এরোগ একবার হয়ে গেলে আর ভালো করার উপায় থাকে না। আমরা কৃষকদের এ রোগ প্রতিরোধ করার জন্য সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছি। তারপরও শেষ রক্ষা হবে কি না জানি না।’ তিনি কৃষকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।

পিবিএ/টিএ/আরআই

আরও পড়ুন...