পিবিএ,ভূরুঙ্গামারী: কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থল বন্দরে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক ও তাদের স্বজন স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শতাধিক শ্রমিক শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কৃষি উপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব ।
সোনাহাট বিজিবি ক্যাম্পের পূর্ব থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে প্রায় ২শ’ পাথর ভাঙ্গা মেশিনের (বোমা মেশিন) বিকট শব্দ ও পাথর ভাঙ্গার ফলে সৃষ্ট ধুলো আর খানাখন্দে ভরা কাঁচা রাস্তা দিয়ে অনবরত ভারী ট্রাক চলাচলের কারনে সারা দিন ওই এলাকা ধুলোয় আচ্ছাদিত থাকে। কোন প্রকার মাস্ক ব্যবহার করা ছাড়াই প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক এ সকল মেশিনে দিনরাত কাজ করছে। দিনের পর দিন মাস্ক ছাড়া কাজ করায় তারা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, বুকের ব্যাথা, এলার্জিসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। শুধু শ্রমিক নয় আশেপাশে বসবাস করা মানুষজন ও ব্যবসায়িক কাজে আগতরাও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।
শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত লোকমান আলী (৫০) ও জোৎস্না বেগম (৪২) তাদের এক্স-রে রিপোর্ট দেখানোর সময় আশেপাশের জাহানারা বেগম, সামিনা বেগম, মহিরণ সহ আরো অনেকেই জানান, এলাকার অধিকাংশ মানুষই এ ধরণের রোগে আক্রান্ত। তারা আরো জানায়, শ্বাস কষ্টে ভুগে রেজিয়া বেগম ও ফিরোজা খাতুন সহ ৪জন মারা গেছে। অসুস্থ্য হয়েছে আরো শতাধিক ব্যক্তি। শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ব্যাপক হারে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আবু সাজ্জাদ মোঃ সায়েম জানান, নাক ও মুখে কোনরূপ প্রটেকশন ছাড়া পাথর ভাঙ্গার কাজ করলে সিলিকোসিস, ডাস্ট এলার্জি, শ্বাসকষ্টসহ ফুসফুসে নানাধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন কাজ করলে পাথরকুচি ফুসফুসে আটকে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
পাথর ভাঙ্গা মেশিনের শব্দের তান্ডবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যঘাত ঘটছে। সোনাহাট দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আসমত আলী জানান, শব্দ ও ধুলার কারনে ক্লাস রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে পাঠদান করতে হচ্ছে। এসময় শ্রমিক নেতা আব্দুল বাতেন একটি দোকানের খাবার ঢেকে রাখা পলিথিনের উপর জমে থাকা ধুলোর আস্তর দেখিয়ে বলেন এই হলো অবস্থা, আমরা নিজেদের উদ্যোগে পাথর ভাঙ্গা মেশিন মালিকদের বহুবার পানি ছিটানোর অনুরোধ করেছি। ধর্মঘট করেও কোন প্রতিকার পাইনি। পাথর ভাঙ্গা মেশিনের বিকট শব্দে মাথাব্যাথা ও শ্রবন শক্তি কমে যাওয়ার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
সোনাহাট বিজিবি ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার আব্দুস সবুর বলেন বিকট শব্দ ও ধুলার কারণে এখানে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পরেছে। বিজিবি সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, এক নাগারে কেউই দুই ঘন্টা ডিউটি করতে পারছেনা। স্থলবন্দর ব্যবসায়ী নেতাদের অনুরোধ করেও কোন লাভ হয়নি।
কৃষক মিজানুর রহমান জানান ফসলের পাতার উপর পাথরের গুড়া ও ধুলার আস্তর পরে থাকায় শস্যের ফলন ভালো হচ্ছে না, ফলদ বৃক্ষ গুলোর পাতায় পাতায় জমে আছে ধুলা, এতে সালোক-সংশ্লেষণ ব্যহত হওয়ায় ফল আসছে না। সোনাহাট স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, শ্রমিকরা যাতে মাস্ক ব্যবহার করে এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে তারপরও মাস্ক ব্যবহার করেনা। তিনি জানান, কাজ শুরুর আগে মেশিন এলাকায় পানি না ছিটানো এবং শ্রমিকদের মাস্ক না পরায় ইতিমধ্যে কয়েকটি মেশিন বন্ধ করা হয়েছে। আমাদানী ও রপ্তানীকারক সমিতির সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমরা এ ব্যাপারে শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছি, মালিকরা মাস্ক কিনে দিয়েছি কিন্তু তারা ব্যবহার করছেনা।
পিবিএ/শামসুজ্জোহা সুজন/বিএইচ