সাগর চৌধুরী,পিবিএ,সৌদি আরব: সর্বহারা প্রবাসী শ্রমিকের আহাজারি ও আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে আকাশ বাতাস। একটু সুখের আশায় সহায় সম্বল বিক্রি করে সুদে টাকা নিয়ে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে বৈধ কন্ট্রাক্ট ভিসা, বিএমইটি ছাড়পত্র, কাজের চুক্তিপত্র নিয়ে সৌদি আরব এসে দীর্ঘ সাত মাসে চার কোম্পানীতে কাজ করে বেতন ভাতা না পেয়ে বাথা বাঙালি মার্কেটে একটি বহুতল ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কিং এ মানবেতর জীবন যাপন করছে ত্রিশজন বাংলাদেশি প্রতারিত শ্রমিক। শুরুতেই প্রতারণার খপ্পরে পড়ে শ্রমিকরা, তারা জানান, দালালরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সৌদি আরবের ফাহাদ কোম্পানীতে রোড ক্লিনার এর ভিসার কথা বলে। প্রতারিত শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য প্রার্থনা করছেন।
কিন্তু ভিসা স্ট্যাম্পিং হওয়ার পর যখন শ্রমিকরা দেখতে পায় ফাহাদ কোম্পানীর স্থলে বাবতেইন কোম্পানীর ভিসা লেগেছে তখন তারা এই ভিসায় সৌদি আরব যেতে অস্বীকৃতি জানায় কিন্তু দালালরা শ্রমিকদের বলে এগুলো কন্ট্রাক্ট ভিসা, বাবতেইন কোম্পানীর ভিসা হলেও কাজ কিন্তু ফাহাদ কোম্পানীতে তাই চিন্তা না করে সৌদি আরব গিয়ে কাজে যোগদানের কথা বলেন।
জনশক্তি রপ্তানীর সমস্ত নিয়ম নীতি মেনে দালালরা কৌশলে হাজার হাজার ফ্রি ভিসাকে কন্ট্রাক্ট ভিসা বলে চালিয়ে দিলেও প্রবাসীদের কল্যাণে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর নজরে আসছে না। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার শ্রমিক প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরলেও টনক নড়ছে না রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্তাব্যক্তিদের। প্রতারণা বন্ধে নেওয়া হচ্ছে না প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তাই, এই সুযোগে প্রবাসী শ্রমিকের রক্তচোষা দালাল চক্র দেশে এবং প্রবাসে গড়ে তুলেছে বিশাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট তিন ভাগে কাজ করছে বলে জানান কয়েকজন ভুক্তভোগী, একটি অংশ বাংলাদেশে ভিসা বিক্রির কাজে নিয়োজিত, আরেকটি সৌদি আরব থেকে ভিসা সংগ্রহ এবং অন্যটি সৌদিতে কাজের সন্ধানে থাকে।
কেউ সাড়ে চার লাখ কেউবা পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে আটকা পড়ে বাধ্য হয়ে নয় শত সৌদি রিয়াল বেতনে সৌদি আরবের রিয়াদের উদ্দেশ্যে গেলো নভেম্বর মাসে যাত্রা করেন। শ্রমিকরা বলছেন, রিয়াদের বিমানবন্দরে অবতরনের পর তাদেরকে কর্মস্থলে নিয়ে যাওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে তারা দেশে দালালদের সাথে যোগাযোগ করলে দুজন বাংলাদেশি বাশার এবং হাসান তাদের বিমানবন্দর থেকে নিয়ে দাখেল মওদুদ এলাকার একটি বিল্ডিং এ রাখেন। তারপর ঐখান থেকে কখনও কন্সট্রাকশনের কাজ, কখনও পাইপ লাইনের কাজ, কখনও আবার ক্লিনার এর কাজ এভাবে চার পাঁচটি কোম্পানীতে কাজ করিয়ে কোন বেতন ভাতা না দিয়ে শ্রমিকদের সাথে প্রতারণা করে তারা। ১২/১৩ ঘন্টা কাজ করে বেতন না পেয়ে হতাশ হয়ে দেশে ফিরতে চান প্রতারিত শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা জানান, সর্বশেষ আল কাসিম শহরের পাঁচ নাম্বারে একটি ক্লিনার কোম্পানীতে তাদের কাজ দেওয়া হয়। সেখানে ছয়শত রিয়াল বেতন তিনশত রিয়াল মিশরি ফোরম্যান এবং সুপারভাইজার কেটে রাখে। টাকা না পেলে তারা মারপিট করে। ঐ ক্যাম্পে একজন বাংলাদেশিকে অতিরিক্ত মারপিট করার ফলে সে এখন পাগল প্রায়। যেকোন সময় মারা যেতে পারে। সেখানে কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এর আগে দুইজন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানান শ্রমিকরা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না ঘরে কিংবা এক রুমে ৪০/৫০ জনকে থাকতে হয়। সেই কোম্পানী থেকে তাদের বের করে দিলে এখানে এসে আশ্রয় নেন। তারা অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। দেশে তাদের স্ত্রী সন্তান পরিবার পরিজন পথের ভিখারি।
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, প্রতারিত শ্রমিকদের সহায়তা করবে বাংলাদেশ দূতাবাস।
পিবিএ/এসসি/জেআই