সৌদিতে শারীরিক নির্যাতনে শিকার হয়ে শুন্য হাতে দেশে আকলিমা

পিবিএ, ঢাকা : নতুন বছরের শুরুতেও সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশিদের ফেরা অব্যাহত আছে। গতকাল রোববার রাতে দেশটি থেকে ফিরেছেন আরও ১৩৭ বাংলাদেশি। রাত ১১ টা ২০ মিনিটে ও রাত দেড়টায় সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ ও এসভি ৮০২ দুটি বিমানযোগে তারা দেশে ফেরনে ১৩৭ জন।

এ নিয়ে গত পাঁচ দিনে ৪৫৪ জন বাংলাদেশি ফিরলেন। বরাবরের মতো গতকালও ফেরত আসাদের মাঝে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ী পৌছানোর জন্য জরুরী সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া বিদেশ থেকে ফেরা মানুষদের কাউন্সিলিং ও আর্থিকভাবে পুনরেকত্রীকরণের কর্মসূচি নিয়েছে ব্র্যাক।

গতকাল ফেরা আকমিনা আক্তারের (৩০) বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলার নরুত্তমপুর গ্রামে। তিনি জানান, সাত মাসে আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে নিয়োগকর্তার শারীরিক নির্যাতনে শিকার হয়ে শুন্য হাতে দেশে ফিরতে বাধ্যহন আকলিমা। আকলিমা বলেন সৌদি যাবার পর থেকে আমাকে ১৮/২০ ঘন্টা কাজ করতে হেতা। কাজ শেষে ঘুমাতে গেলে মালিক বিরক্ত করতো, কাজ করলেও বেতন দিতেন না বেতন চাইলে বলতেন তাকে নাকি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আরেক নারী গৃহকর্মী হাসিনা (২৭) বাড়ী হবিগঞ্জ আট মাস পূর্বে গিয়েছিলেন সৌদি।

তারও গল্প একই কিন্তু হাসিনার উপর নির্যাতনের মাত্রা এতই বেশি যে বিমানবন্দরে দাঁড়াতেই পারছিলেন না তিনি। হাসিনা বলেন মালিক ভালা না খালি মারে আর খারাপ খারাপ কথা বলে। কথা না শুনলে মারে। ফেরত আসা টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার সাদ্দাম হোসেন জানান, মাত্র এক বছর পূর্বে এসি টেকনিশিয়ানের কাজ নিয়ে চার লাখ দশ হাজার টাকা খরচ করে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে চার মাস কাজ করলেও সঠিক বেতন পাননি সাদ্দাম। তারপরেও হাল ছাড়েননি কাজ থেকে রুমে ফেরার পথে পুলিশ ধরে আকামা থাকা সত্বেও দেশে ফেরত পাঠান সাদ্দামকে।

সুমানগঞ্জের আবুল কালাম জানান, দুই বছর আগে প্রিন্টিং এর কাজ নিয়ে ৫ লাখ চাকা খরচ করে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। কিন্তু ভাগ্যের চাকা না ঘুরতেই দেশে ফিরে আসতে হল তাকে। একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে ফিরেছেন চট্রগ্রামের সগির হোসেন, সিরাজুল কবির,সিলেটের ফুরকান, মোঃ শাহ আলম, রফিক, নোয়াখালীর শামসুদ্দিন। দেশে ফেরা অনেক যুবকের অভিযোগ, আকামা তৈরীর জন্য কফিলকে (নিয়োগকর্তা) টাকা প্রদান করলেও কফিল আকামা তৈরি করে দেয়নি।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর কফিলের সাথে যোগাযোগ করলেও গ্রেপ্তারকৃত কর্মীর দায়-দায়িত নিচ্ছে না। বরং কফিল প্রশাসনকে বলেন ক্রুশ (ভিসা বাতিল) দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিতে। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, গতবছর ২০১৯ সালে সৌদি আরব থেকে ২৪ হাজার ২৮১ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নতুন বছরের শুরুর পাঁচ দিনে ফিরলেন ৪৫৪ জন।

এইভাবে ব্যর্থ হয়ে যারা ফিরছেন তাদের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। পাশাপাশি এভাবে যেন কাউকে প্রতারিত না হতে হয়, যে কাজে গিয়েছেন সেই কাজই যেন পান এবং খরচের টাকাটা তুলে ভাগ্য ফেরাতে পারেন সেটা নিশ্চিত তরতে হবে রাষ্ট্র ও দূতাবাসকে। এক্ষেত্রে রিক্রটিং এজেন্সিকেই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। আর সরকারের নেয়া সাম্প্রতিক ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে নারী কর্মীদের নিপীড়ন কমে আসবে বলে আমরা মনে করি।

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...