স্কুলের বকেয়া পরিশোধ করতে না পেরে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

মহিউদ্দিন আল আজাদ,চাঁদপুর প্রতিনিধি: হাজীগঞ্জে বার্ষিক পরীক্ষার শুরুর পূর্বে স্কুলের বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে না পেরে জান্নাতুল ফেরদৌস নামের (১৪) এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের কোন্দ্রা গ্রামের এ ঘটনা ঘটে। আত্মহননকারী ওই শিক্ষার্থী কোন্দ্রা গ্রামের মনির হোসেনের মেয়ে ও বেলচোঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, এ দিন সকালে জান্নাতুল ফেরদৌস কিটনাশক পান করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন তাকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ওয়াশের (পেট পরিস্কার) পর তার শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেপার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তখন পরিবারের লোকজন তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়।

এদিকে স্থানীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে জান্নাত কিটনাশক পান করে। এমন তথ্যই পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় লোকজন ও হাসপাতালে জানিয়েছেন। তবে সংবাদকর্মীরা পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বললে, বিষয়টি তারা অস্বীকার করেন।

জানা গেছে, আগামিকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। এর মধ্যে উপজেলার সকল বিদ্যালয়গুলোতে বকেয়া আদায় পূর্বক শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়া হচ্ছে।

নিহত জান্নাতুল ফেরদৌসের বাবা মনির হোসেন সংবাদকর্মীদের বলেন, আমার মেয়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল এবং পড়াশোনায় একটু পিছিয়ে ছিল। আমি তাকে বলেছিলাম, আরও এক বছর এই (অস্টম) ক্লাসে থাকতে। পরীক্ষার ফি জমা দেওয়া হয়নি, তাই আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) তার পরীক্ষা অনিশ্চিত ছিল। আজ (বুধবার) সকালে টাকা নিয়ে তাকে দেওয়ার আগেই সে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এএইচএম খোরশেদ আলমের মুফোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়, কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ ও নিউজ লিখা পর্যন্ত ফোন ব্যক না কারা তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন পাটওয়ারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এমনটি হওয়ার কথা নয়। কোনো শিক্ষার্থী বকেয়া টাকা না দিলেও (পরিশোধ) আমরা পরীক্ষা নেই।

এসময় তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক মো. জসিম উদ্দিন ওই এলাকার। তার সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে জান্নাতুল ফেরদৌস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ঘটনাস্থলে আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। পরবর্তীতে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, আত্মহননের বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে আপনার (সংবাদকর্মী) মাধ্যমে স্কুলের বকেয়া বেতনের বিষয়ে জানলাম। বিষয়টি আমি দেখছি।

এসময় তিনি জানান, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, টাকার কারণে যেনো কোন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বন্ধ না থাকে। বিষয়টি স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান দেখবে, প্রয়োজনে অভিভাবকদের আমার কাছে পাঠানোর কথা বলে দিয়েছি।

আরও পড়ুন...