কবির আল মাহমুদ, স্পেন : স্পেনে করোনা সংকটে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্তে বাংলার খাদ্যসহায়তা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এবং মাদ্রিদে ভালিয়েন্তে বাংলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে তাদের সদস্য ও উপদেষ্টাদের মুখ্য সহায়তায় বাঙালি পাড়ার সুপরিচিত এই মানবাধিকার সংগঠন ‘ভালিয়েন্তে বাংলা’ অভিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পঞ্চম দফায় ‘ফ্যামিলি ফুড ব্যাগ’ বিতরণ শুরু করেছে ৪ জুন।
যাঁরা সাময়িকভাবে আয়রোজগার থেকে বঞ্চিত, বিশেষ করে কাগজপত্রবিহীন অবৈধভাবে স্পেনে আছেন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন, তাঁদের সহযোগিতায় মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্তে বাংলা সার্বিক তত্ত্বাবাধনে করোনার এই সংকট শুরু হওয়ার পর থেকেই এ প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় যাঁরা কর্মহীন বা খাদ্যসংকটে রয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাছাড়া যেকোনো দুর্দশাগ্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশির জন্যও প্রকল্পটি কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এখানকার অনেক অসহায় ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে চাল, ডাল, মাছ, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহের কার্যক্রম শুরু করেছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে স্পেনে গত ১৩ মার্চ থেকে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা চলছে। এ অবস্থায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত (৪ জুন পর্যন্ত) স্থানীয় কমিউনিটির নেতাদের সহযোগিতায় ভালিয়েন্তে বাংলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশি সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রায় দুই হাজার প্রবাসী বাংলাদেশিকে এই সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের এই কার্যক্রম চলমান।
গত বৃহস্পতিবার (৪ জুন) প্রায় ৫৮০ অভিবাসী বাংলাদেশির মধ্যে ফ্যামিলি ফুড ব্যাগ বিতরণ করা হয়। ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে এলাহীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও সাধারণ সম্পাদক রমিজ উদ্দিনের পরিচালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্পেনের মূল ধারার রাজনৈতিক দল মাছ পাইসের মুখপত্র এবং মাদ্রিদ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রিতা মায়েস্ত্রে ফেরনান্দেজ, মাস মাদ্রিদ পরিচালক এরিখ জনসন, রেড সলিদারিদাদের নিনেস, রেড ইন্টার লাভাপিয়েসের পেপা তররেস, মাইতি, পিলার প্রমুখ।
এছাড়া প্রবাসী কমিউনিটি ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেনের সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান সুন্দর, স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাহাদুল সুহেদ, বাংলাদেশ মসজিদ পরিচালনা কমিটির অর্থ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, গ্রেটার সিলেট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোঃ লুৎফুর রহমান, গ্রেটার সিলেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব আবু জাফর রাসেল, কমিউনিটি নেতা জাহাঙ্গীর আলম ইব্রাহীম। ভালিয়েন্তে বাংলার সদস্যদের মধ্যে জুলহাস উদ্দিন, আল-আমীন, মানিক মিয়া, মো. শাহ আলম, মকবুল হক, ফয়সাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় ভালিয়েন্তে বাংলা পক্ষ থেকে ৫৮০ ফুড ব্যাগ বিতরণ করে। ফুড ব্যাগে ছিল চাল, ডাল, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ, তেল, ডিম, চিনি, লবণ, দুধ, সাবানসহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক খাদ্যদ্রব্য। চলমান জরুরি অবস্থার কারণে চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপদগ্রস্ত প্রবাসীদের যাঁরা আসতে পারেননি, তাঁদের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী।
এর আগে সংগঠনের এক বিজ্ঞপ্তিতে কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি যদি চরম খাদ্যাভাবে পড়েন কিংবা বেতন না পান, সে ক্ষেত্রে ফেসবুকে অথবা হোয়াটসঅ্যাপে তথ্য প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছিল। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আর্থিক সংকটে পড়া আবেদনকারীদের তালিকা তৈরি করা হয়। পরে সেই তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়।
ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে এলাহী দাবির পরিপেক্ষিতে স্পেনের ক্ষমতাসীনদলের মুখপত্র এবং উপস্থিত বিভিন্ন এনজিও সংস্থার সদস্যরা স্পেনে বসবাসরত প্রবাসীদের জন্য অফিস, আদালতসহ সর্বত্র অফিশিয়াল কার্যক্রমে প্রয়োজন মোতাবেক বাংলায় অনুবাদকারী প্রদানসহ অবৈধ বসবাসকারীদের বৈধতা দিতে সরকারের নিকট আহ্বান জানাবেন বলে পুণরায় আশ্বাস দেন।
এসময় মাছ পাইসের মুখপত্র এবং মাদ্রিদ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রিতা মায়েস্ত্রে ফেরনান্দেজ বলেন, বর্তমান এই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের সাথে থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এসোসিয়েশন দে ভালিয়েন্তে বাংলা ও রেড ইন্টার লাভাপিয়েস এবং রেড সরিদারিদাদ। মাস মাদ্রিদের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই আমরা সবার পাশে থেকে সাহায্য করছি, বিশেষ করে আমাদের নগর আর লোকালয়ে সবাই যেভাবে কাজ করছে, অসংখ্য পরিবারকে প্রতিদিন খাবার দিচ্ছে, তাদের বিভিন্ন ভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আজকেও ৫৮০’র অধিক পরিবারের নাম লিস্ট করা হয়েছে যাদের খাদ্য সহোযোগিতা দরকার, এবং তাদেরকে সবাইকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরা শুধুমাত্র খাবার দিয়েই তাদের পাশে থাকছেন না, হাজারো পরিবার যাদের স্পেনে অবস্থান করার বৈধ কাগজপত্র নেই তাদের পাশে থেকে তাদের বৈধ করার দাবীও জানাচ্ছেন। তাই অবৈধদের বৈধ করার যে দাবি উঠেছে তা খুবই জরুরি এবং সরকারকে এবিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাজের গতি আরো বাড়াতে হবে, কারন বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলো চালু থাকলে এসব অবৈধ অভিবাসীরা তাদের কাগজ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ করতে পারবে। এজন্যই অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করার দাবীর সাথে আমাদের পাশে থাকতে হবে। তাই আমরা ভালিয়েন্তে বাংলার সাথে আমাদের প্রতিবেশিদের প্রত্যেকটি কার্যক্রমের সাথে আছি।”
পিবিএ/কবির আল মাহমুদ/এমএ