নিজে যেমন স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন তেমনি অন্যকেও স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসেন। স্বপ্নের ঝিলিমিলি বারতা পৌঁছে দেন মানুষ হতে মানুষে। কিভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়, কেমন করে স্বপ্নের সরুপ উন্মোচন করতে হয়, আত্মবিশ্বাসের কঠিন বলয়ে সুদৃঢ় অবস্থান করে সফলতার শিখরে পৌঁছাতে হয় তার সবকটি দ্বার নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে লিখেন- স্বপ্ন আত্মবিশ্বাস ও সফলতা বইটি। বইটি ব্যাপক সফলতা পাওয়ার পর স্বপ্নচারী কবি অ আ আবীর আকাশ বলে উঠেন- ‘ধনি হতে চেয়ো না কবি, নইলে প্রেমিক হতে পারবে না।’
পরিশ্রম আর মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ তার স্বপ্নের সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে যায়। কঠিন পরিশ্রম আর খাটাখাটুনির ফল হিসেবে এমনই একজন তার স্বপ্নের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছেছেন। তিনি অ আ আবীর আকাশ। শৈশব জীবনে মোহাম্মদ রাজিব হোসেন রাজু নামে পরিচিতি পেলেও লেখক জীবনে তিনি অ আ আবীর আকাশ নামেই পরিচিত। বাবা খলিলুর রহমান, ছিলেন ব্যবসায়ী পরবর্তী জীবনে হলেন দক্ষ কৃষক। বাবাকে শৈশব জীবনেই হারিয়েছিলেন এ লেখক। মা তাজিয়া বেগম একজন গৃহিণী। জন্ম বৃহত্তর নোয়াখালীর মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদী বেষ্টিত উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর সদরের মহাদেবপুর গ্রামে।
তাঁর সাথে দেখা হয় বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলায়। লক্ষ্মীপুরের লোকসাহিত্য সংস্কৃতি ও বিশ্বাস নামক গবেষণাধর্মী বইয়ের মোড়ক উন্মোচন শেষে আলাপচারিতা হয় তাঁর সাথে।
জন্মের পর বেশ চঞ্চল ও ডানপীঠে স্বভাবের ছিলেন অ আ আবীর আকাশ। খেলাধুলা, গাছেচড়া, পানিতে লাফ দেয়াসহ এমন কোনো খেলা বাদ রাখেননি যা তিনি খেলেননি। এ চঞ্চল ও ডানপীঠে হওয়ার দরুন তার শৈশব জীবনেই নেমে আসে অন্ধকার। বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় বাম হাত কেটে ফেলতে হয়। তারপরও থেমে থাকেননি তিনি। স্বভাবত সৃজনশীল মানুষের বেড়ে উঠা এরকমই হয়। পড়ালেখার পাশাপাশি তৃতীয় শ্রেনী হতেই সাহিতচর্চা শুরু করেন। বহু বাধা বিপত্তি ডিঙিয়ে আজ এ মানুষটি সফলতার আলোয় আলোকিত।
স্বপ্ন দেখা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। তিনি স্বপ্ন দেখতেন কবি হবেন। বই প্রকাশ করবেন। মানুষ তার কবিতা পড়ে আন্দোলিত হবে। বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখা স্বপ্ন আশা একদিন ডালপালা মেলে সফলতার দেখা দিলো। জেলা শহর থেকে প্রকাশিত প্রায় প্রতিটি পত্রিকায় তাঁর জন্য সাপ্তাহিক একটি করে পাতা বরাদ্দ রাখতেন পত্রিকার সম্মানীত সম্পাদকেরা। কোনো পাতায় পথে-প্রান্তরে যেতে যেতে, কোনো পাতায় ফুলের হাসি তারা বনে, কোনো পাতায় সাহিত্য, ম্যাগাজিনের পাতায় এসব দেখি কানার হাট বাজার, কোনো পাতায় চলতি ঘটনা নিয়ে লিখতেন। পত্রিকায় লেখা মেকআপ দিতে গিয়ে অনেক সময় বাড়ি ফেরার সুযোগ হতো না। নিরলস শ্রম দিয়ে ডুবে থাকতেন সৃজনশীল কাজে।
তাঁর প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ হৃদয়ের অগ্নি পঙতি ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হয়। এর অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর আপন বড় ভাই গাজী শাহাবুদ্দিন সাফু’র অকাল প্রয়াণ হয়। এতে লেখকের জীবনে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে। সব ধরনের ধকল কেটে ২০১৭ সালের বইমেলায় স্বপ্ন আত্মবিশ্বাস ও সফলতা নামের মোটিভেশনাল গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ২০২২ সালের আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রকাশিত হয় লক্ষ্মীপুরের লোকসাহিত্য সংস্কৃতি ও বিশ্বাস বইটি। লক্ষ্মীপুর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য কৃষ্টি সাহিত-সংস্কৃতি আচার-আচরণ ও বিশ্বাস নিয়ে দীর্ঘ বারো বছর ধরে বিস্তর গবেষণা করে লেখা এ বই। প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে আশিটা পান্ডুলিপি।
কবিতা ছড়া গীতিকবিতা প্রবন্ধ নিবন্ধ আলোচনা কলাম লিখছেন দেশবিদেশের বহু নামীদামী পত্রিকা ম্যাগাজিন ও অনলাইনে। সাহিত্যে অবধান রাখায় পেয়েছেন নানা পুরস্কার। শুণ্য দশক থেকে সম্পাদনা শুরু করেছেন। অশরীরী নাটাই উল্কা চন্দ্রাবতী দূরদিগন্ত-১ দূরদিগন্ত-২ তাজিয়া শব্দচাষ জলপাই লাল সূর্য যুবপ্রত্যয় রক্ত সিঁড়ি সময়ের কণ্ঠ ভাঁজপঙতি। খবরের কাগজ সম্পাদনা করছেন ২০০৮ সাল হতে। দৈনিক মুক্ত বাঙালি’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, সাপ্তাহিক গ্রামীণ কণ্ঠ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। এছাড়াও জাতীয় জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকার সাবএডিটর হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে লেখালেখির পাশাপাশি অ আ আবীর আকাশ সাংবাদিকতা করছেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতিমূলক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন।
সফলতার রহস্য সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান সময়ের কাজ সময়ে করাই হলো তার সফলতা। যে সময়ে বসে অন্যরা আড্ডায় মশগুল থাকে সে সময়ে সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন তিনি। শীত ও গরম উপেক্ষা করে বাবার কুটিরে দীর্ঘ রাত জেগে লেখালেখি করেন। প্রসব বেদনার মতো লেখকের সৃজন যন্ত্রণা অনুভূত হয়। এ সময়ে লেখকের কাছে দুনিয়া ফানসে লাগে।
ব্যক্তি জীবনে অ আ আবীর আকাশ কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন না আবার কাউকে তার সমকক্ষও ভাবেন না। নিজের কাজ নিজেই করতে পছন্দ করেন। কাউকে খুশি করতে বা কাউকে বেজার করতেও লেখেন না। ফরমায়েশি লেখা তিনি এড়িয়ে চলেন। তৈলাক্ত লেখাকে ঘৃণা করেন বলেও জানালেন এ লেখক। বর্তমানে আবীর আকাশ জার্নাল নামক বারো পৃষ্ঠার সাহিত্য সংস্কৃতিমূলক কাগজ সম্পাদনা করছেন।