
মোঃ এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) : বাজুস। পূর্ণ নাম-বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভুমিকা পালন করছে। জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জুয়েলারি দোকানে প্রকাশ্যে ডাকাতি ও চুরির ঘটনা বেড়েছে। ডাকাতদের হামলায় ২০ জুয়েলারি ব্যবসায়ী নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু ব্যবসায়ী। এসব ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি ও চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকার এবং নগদ টাকা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন(বাজুস)। গত ৪ এপ্রিল জুয়েলারি শিল্পের নিরাপত্তার দাবিতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন(বাজুস)-এর সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য ও দাবি জানান কমিটির নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে নেতৃবৃন্দ, জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও সারা দেশের জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা জোরদার করার অনুরোধ জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর, সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, রিপনুল হাসান, উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, সহ-সম্পাদক সমিত ঘোষ অপু, স্ট্যাডিং কমিটি অন ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশনের সদস্য সচিব পবন কুমার আগরওয়াল।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিশ্ব বাজারে রপ্তানি হবে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা সোনার বার ও অলংকার। কিন্তু এই পরিশোধনাগার স্থাপনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এই নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি নির্ধারকদের উপর অনেকখানি দায় বর্তায়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০৪১ সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাজুসের বর্তমান নেতৃত্ব বদ্ধপরিকর। বাজুস মনে করছে-বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জুয়েলারি শিল্পে ভ্যালু এডিশন করে সোনার অলঙ্কার রপ্তানি সম্ভব। তাই সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ গড়তে জুয়েলারি শিল্পে সকল সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় বাজুস।
গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এম.পি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট উপস্থাপনের পর ৫ জুন বাজুসের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে আশার আলো দেখা গেলেও, জুয়েলারী শিল্পের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবে ব্যাগেজ রুলের সংশোধন করায় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে বাজুস।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ব্যাগেজ রুল সংশোধন করায়, দেশে সোনা চোরাচালান এবং মুদ্রা পাচার অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে। কারণ ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে এর আগে অবাধে স্বর্ণের বার বিদেশ থেকে দেশে প্রবেশ করছে। আবার সেই স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অর্থমন্ত্রীর এই যুগান্তরকারী পদক্ষেপ বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানিতে উৎসাহিত করবে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন(বাজুস)-সব সময় স্বর্ণ বিক্রেতা ও ক্রেতা সাধারনের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে আসছে। তাই ক্রেতা সাধারন ও বিক্রেতাদের সুবিধার দিকে দৃষ্টিপাত করে, ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে আনয়নকৃত গহনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা ১০০ গ্রাম থেকে কমিয়ে ৫০ গ্রাম করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এতে করে স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীদের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় জুয়েলারি শিল্পের দিকে ক্রেতা সাধারন আকৃষ্ট হবে। স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীদের বাচাঁনোর জন্যে এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাজুস।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী ফেনী শহরের বিমল সাহা, চৌদ্দগ্রাম বাজারের নয়ন সাহা, নাঙ্গলকোটের অনিক ও কুমিল্লার রুহুল আমিন বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে বাজুস স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। এটা ভালো উদ্যোগ। সরকারের উচিত বাজুসের সকল দাবি মেনে নেওয়া। যাতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জুয়েলারী শিল্প ব্যাপক অবদান রাখতে পারে’।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি কুমিল্লা জেলা সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান বলেন, ‘স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও স্বর্ণ কারিগরদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন(বাজুস)। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ও আর্থিক অগ্রগতিতে বাজুস নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে সরকার ও ব্যবসায়ীদের উচিত-বাজুসকে সহযোগিতা করা’।