পিবিএ ডেস্ক : ইডি-র অফিসে স্বামী রবার্ট বঢরাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নামিয়ে দিয়েই কংগ্রেস দফতরে ঢুকলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি স্পষ্ট জানান, ‘উনি আমার স্বামী। আমার পরিবার। আমি ওনার পাশে রয়েছি।’ প্রিয়াঙ্কা সক্রিয় রাজনীতিতে এলে কংগ্রেস লাভবান হবে জেনেও দলের প্রবীণ নেতাদের মনে এতদিন একটাই কাঁটা খচখচ করত। সোটা হলো, রবার্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের খেসারত প্রিয়াঙ্কাকে দিতে হবে না তো?
কারণ প্রিয়াঙ্কা রাজনীতিতে এলে যে বিজেপি রবার্টের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগবে, সেটা জানা কথা। সেই চাপ কীভাবে সামলানো হবে? প্রিয়াঙ্কা নিজে প্রথম দিনই বুঝিয়ে দিলেন, অস্বস্তির প্রশ্ন নেই। স্বামীর পাশেই আছেন এবং সেই পাশে থাকার বার্তাটি সকলের কাছে পৌঁছেও দিতে চান তিনি।
এই প্রথম ইডি-র জেরার মুখে পড়লেন রবার্ট। বিকেল ৪টে থেকে শুরু করে ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। লন্ডনে বেনামি সম্পত্তি কেনার অভিযোগের মামলায় আদালত রবার্টকে ইডি-র সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। আজ বিকেলে লোদী এস্টেটের বাড়ি থেকে রবার্ট ও প্রিয়াঙ্কা একই সঙ্গে সাদা ল্যান্ড ক্রুজারে চেপে বের হন। পিছনে প্রিয়াঙ্কার কালো রঙের গাড়ি ফাঁকাই আসছিল। বিকেল ৩ টা ৪৭ মিনিটে সাদা গাড়িটা এসে জামনগর হাউসে ইডি-র আঞ্চলিক দফতরে পৌঁছায়। আশপাশের সরকারি দফতরের কর্মী ও উৎসাহী জনতার ভিড় আশাই করেনি, গাড়ির ভিতরে খোদ প্রিয়াঙ্কা থাকবেন। তাকে দেখতে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন। পকেটে সিল্কের রুমাল গোঁজা ছাই রঙের স্যুট পরা রবার্ট স্ত্রীর হাত ছুঁয়ে বিদায় জানিয়ে হাসিমুখেই ইডি-র দফতরে ঢুকে যান। গাড়ি ঘুরিয়ে কংগ্রেস দফতরের দিকে চলে যান প্রিয়াঙ্কা।
স্ত্রীর রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তে রবার্ট কয়দিন আগেই টুইট লিখেছিলেন, ‘অভিনন্দন পি…জীবনের প্রতিটি ধাপে তোমার পাশে রয়েছি’। আজ প্রিয়াঙ্কাও একই ভূমিকা নিলেন। রবার্টের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির মামলা, ইডি-র তলব- পুরোটাই ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে দাবি করলেন তিনি। কংগ্রেস দফতরে ঢুকে নিজের মুখে জানিয়ে দিলেন, ‘আমি রবার্টের পাশে রয়েছি।’
রবার্টের বিরুদ্ধে ইডি-র মূল অভিযোগ, তিনি বেনামে লন্ডনে ৬টি ফ্ল্যাট ও ২টি বাড়ি কিনেছেন। এর মধ্যে ব্রায়ানস্টন স্কোয়ারে ১৯ লক্ষ পাউন্ডে একটি ফ্ল্যাট কেনা নিয়ে আর্থিক নয়-ছয়ের তদন্ত শুরু হয়। ইডি-র দাবি, এই সূত্র ধরে আরও সাতটি সম্পত্তির হদিস মিলেছে। যার মধ্যে একটির দাম ৫০ লক্ষ পাউন্ড, আর একটির ৪০ লক্ষ পাউন্ড। ইডি-র দাবি, অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ডকে ভিভিআইপি চপারের বরাত ও একটি বিদেশি সংস্থাকে তেল মন্ত্রনালয়ের বরাত পাইয়ে দেওয়ার ঘুষ হিসেবেই রবার্ট এই টাকা পেয়েছেন। প্রতিরক্ষা বরাতের দালাল সঞ্জয় ভাণ্ডারির সঙ্গেও রবার্টের যোগাযোগ ছিল বলে ইডি-র অভিযোগ। ভাণ্ডারি দু’টি ফ্ল্যাট কিনে একই দামে বেচে দেন। সেই টাকা রবার্টের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছিল বলে ইডি দাবি করছে। রবার্টের ঘনিষ্ঠ মনোজ অরোরাকে আগেই জেরা করেছিল ইডি। আজ ইডি-র ডেপুটি ডিরেক্টর রাজীব শর্মা, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর এম এল শর্মার নেতৃত্বে সাত জনের একটি দল রবার্টকে জেরা করে। ৪০টি প্রশ্নের একটি তালিকা আগে থেকেই তৈরি ছিল।
সরকারি সূত্রের খবর, রবার্ট এদিন ইডি-র কাছে বলেছেন, তিনি লন্ডনের ওইসব সম্পত্তির মালিক নন। তার সঙ্গে সঞ্জয় ভাণ্ডারির কোনও সম্পর্ক নেই। মনোজ অরোরা তার সঙ্গে কাজ করতেন বলে চেনেন। কাল তাকে ফের জেরা করা হতে পারে।
রবার্ট-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা জগদীশ শর্মা কাল আকবর রোড ও লোদী এস্টেটে দলের অফিসে রাহুল, প্রিয়াঙ্কা ও রবার্টের ছবি দিয়ে পোস্টার লাগিয়েছিলেন। তাই নিয়ে বিজেপি হইচই জোড়ে। বলা হয়, ‘ছবিতে দু’জন আসামি। একজন রাহুল, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায়। অন্যজন রবার্ট। যাকে ইডি জেরা করছে।’ ছবিটা সরিয়ে নেওয়া হয় পরে। তবে কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘ভোটের মৌসুম। ফলে রোজই কাউকে না কাউকে জেরার মুখে পড়তে হবে।’
পিবিএ/জিজি