স্বামীর প্রেরণায় একজন সমাজকর্মীর গল্প

পিবিএ ডেস্ক: নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কুষ্টিয়ার আফরোজা আক্তার ডিউ। পিতা প্রয়াত সোহরাব হোসেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত (মৃত্যুকালীন পর্যন্ত) কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সরকারি চাকরি ছেড়ে কলকাতা থিয়েটার রোডে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারে যোগদান করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মা শাহানারা বেগম মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য, বস্ত্র সরবরাহ ও অস্ত্র সংরক্ষণ করেছেন। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। ডিউয়ের চাচা প্রয়াত আবুল কাশেম পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এমন পারিবারিক প্রতিবেশে তার বেড়ে ওঠা। রক্তে তার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরম পরিতোষে শিরা উপশিরা বেয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছে।

তারই রেশ কেবল টেনে চলেছেন এই নারী নানাবিধ কর্মকান্ডে মাধ্যমে। একজন নারী যে বহুমাত্রিক গুণ ও কর্মের অধিকারীনি হয় তার কাজ দেখলে বোঝা যায়। চাকরি করে, সংসার সামলে, সন্তান লালন পালন করে, সাংবাদিকতা, রাজনীতি, সংস্কৃতির অধ্যয়ন ও চর্চা চালিয়ে যাওয়া, সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা এবং সকল প্রকার অন্যায়, নিপীড়নের বিরুদ্ধে কলম-কাগজে প্রতিবাদের পাশাপাশি রাজপথেও সক্রিয় ভূমিকা রেখে মানবীয় চরিত্রের স্বরূপ প্রকাশ করে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে এই নারী। শুধু কথায় নয় কাজে তিনি স্বাক্ষর রেখেছেন। মানুষের মঙ্গলের জন্য, চিকিৎসার জন্য, লেখাপড়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তিনি নগদ অর্থ, বইখাতাপত্রসহ মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে চলেছেন এই নারী। ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিকের পরিবারে নানাপদের সহযোগিতা করে চলেছেন । তার সন্তানের লেখাপড়ার জন্য ২০১৮ থেকে অদ্যাবধি মাসে এক হাজার টাকা দিয়ে যাচ্ছেন।

২০১৮ সালে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র রাফ্ফান সামী ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার জন্য নগদ এক লাখ টাকার আর্থিক সাহায্য করেছেন এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলামের মাধ্যমে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। সমাজসেবামূলক কাজের জন্য বিশেষ করে শিশুদের জন্য কোমলমতি মায়া ও সহযোগিতাপ্রবণ মনের জন্য কুষ্টিয়ার মানুষ তাকে মানবতার মা উপাধিও দিয়েছে ইতোমধ্যে। এসব ছাড়াও সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চা, সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালিয়ে নেয়া এবং নারী সাংবাাদিক হিসেবে কুষ্টিয়ায় তার প্রত্যক্ষ বিচরণ এবং কার্যকর ভূমিকা প্রশংসা কুড়িয়েছে। একজন নারী যে পুরুষের চেয়ে কখনও কখনও এগিয়ে, বেশি প্রজ্ঞা ও গুণের অধিকারী তার প্রমাণ এই নারী। দুহাতে সমানে শিক্ষা, সমাজসেবা, সাংবাদিকতা ও সামাজিক কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরও তিনি কুষ্টিয়ার রাজপথে ডিউয়ের পদচিহ্ন সেই কথা বলে। তার কথা ও কাজে উচ্চারিত হয় মানুষ আর এই মানুষই মিলিত মানুষ। লালন সাঁইজির এই অমর কথাকে কাজে রূপদানের জন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তার অদম্য এই রাজসিক কার্যক্রম আর সব নারী থেকে তাকে আলাদা করে চিহ্নিত করেছে। এ কাজে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তার স্বামী সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সম্পাদক ও দৈনিক দৈনিক আরশীনগর, দৈনিক পদ্মা গড়াই, ডেইলি অথেনটিক পত্রিকার সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব।

এই কর্মবীর মহিলা ১৯৭৬ সালের ২ এপ্রিল কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ইংরেজীতে স্নাতকোত্তর নারী বিএডও করেছেন। বর্তমানে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন পাশাপাশি ডেইলি অথেনটিক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, ডেইলি নিউ নেশন ও দৈনিক বঙ্গজননী কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও সফল এই নারী। শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে ২০১৬ সালে জয়ীতা হয়েছেন। বর্তমানে নানাবিধ সামাজিক ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই নারী কুষ্টিয়া জেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল ও সমন্বয় কমিটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সদস্য সচিব ছিলেন। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, কুষ্টিয়া জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি। এছাড়াও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সহ-সভাপতি, অদ্বিতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য সচিব, কুষ্টিয়া লেডিস ক্লাবের সাহিত্য ও প্রচার সম্পাদক, কুষ্টিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য, লালন একাডেমি, চক্রবাক আবৃত্তি সংসদ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক জোট, কুষ্টিয়ারও সদস্য।

উল্লেখ্য যে তিনি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিবর্তন (গব: রেজিস্ট্রার্ড) কুষ্টিয়ার কো-অর্ডিনেটর, সরকারী শিশু সদন (বালিকা) বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং কুষ্টিয়া জেলা রেফারি আম্পায়ার সমিতির আজীবন সদস্যও এই বহুমাত্রিক গুণী মানুষটি।

এছাড়াও রাজনীতি মনস্ক সচেতন এই সমাজকর্মী বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ কুষ্টিয়া জেলা শাখারও বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক। একজন নারী হিসেবে স্বামী, সংসার, কর্মস্থল সামলে নানাবিধ সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ রেখে চলেছেন দীর্ঘ দুইযুগ ধরে। আর এসব সংগঠনে তিনি মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন অত্যন্ত ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে। মানবীয় গুণাবলী সম্পন্ন এবং সমাজ ও সংস্কৃতি মনস্ক নারী আফরোজা আক্তার ডিউ দুই মেয়ে তাসনিয়া ইসলাম তানহা, নূসাইফা ইসলাম ত্বাহা ও স্বামী সংসার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন আরশীনগর ভবন,সাদ্দাম বাজার মোড় কুষ্টিয়ায়।

 

 

পিবিএ/কে এস/হক

আরও পড়ুন...