স্মার্টফোন যাপিত জীবনের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ। অনেকের স্মার্টফোন ছাড়া চলে না। ফোন মানুষকে এগিয়েও নিয়েছে। এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা মনে হয় শেষ হবে না। তাই অনেক শিশুবিশেষজ্ঞ শিশু-কিশোরদের স্মার্টফোন থেকে দূরের রাখার পরামর্শ দেন। তবে ভারতে চালানো এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, অধিকাংশ দম্পতি মনে করেন, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার তাঁদের সম্পর্কের ক্ষতি করেছে। একটি ফোন কোম্পানির সমীক্ষায় এমনটাই দেখা গেছে।
সমীক্ষা চালানো হয় ভারতের বড় শহরগুলোতে। সমীক্ষা চালানো হয়েছিল দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, আহমেদাবাদ এবং পুনের মতো বড় শহরে। সমীক্ষার জন্য হাজারের বেশি দম্পতিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ওপর স্মার্টফোনের প্রভাব নিয়ে চীনের একটি মুঠোফোন নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান ভিভো একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। অনেকে বলছেন, স্মার্টফোনে সময় কাটানো তাঁদের আরাম করার সব থেকে পছন্দের উপায়। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ মনে করেন, স্মার্টফোন তাঁদের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে গেছে, আলাদা করা যাবে না।
সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, স্বামী কিংবা স্ত্রী প্রতিদিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় ব্যয় করেন স্মার্টফোনে। অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে প্রভাব পড়বে। অন্তত ৭০ শতাংশ স্বামী কিংবা স্ত্রী বলছেন, স্মার্টফোনে ডুবে থাকা অবস্থায় কিছু জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বিরক্ত হন। ‘দাম্পত্য সম্পর্কের ওপর স্মার্টফোনের প্রভাব’ শীর্ষক সমীক্ষাটি চালিয়েছে ভারতের সাইবার মিডিয়া রিসার্চ। সমীক্ষার কেতাবি নাম ‘সুইচ অফ’।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতের বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলেছে, তারা তাদের স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে সময় কাটানোর সময়ও স্মার্টফোনে আবদ্ধ থাকে। ৬৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, স্মার্টফোনের কারণে তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে।
স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ৭০ শতাংশ দম্পতি বলেছেন, স্মার্টফোনের বেশি ব্যবহার তাঁদের প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো সময়ের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে। ৬৯ শতাংশ বলেছে, স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক ব্যাহত হচ্ছে।
৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা তাঁদের স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে চান। মানুষ স্মার্টফোনের নানা প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হতে চান। মানুষ সমস্যাগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং পরিবর্তনও চান। উত্তরদাতাদের ৮৮ শতাংশ একমত যে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার জীবনসঙ্গীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ৯০ শতাংশ মানুষ তাঁদের জীবনসঙ্গীর সঙ্গে অর্থপূর্ণ কথোপকথন এবং আরও অবসর সময় সঙ্গীকে দিতে চান।
গবেষণার বিষয়ে ভিভো ইন্ডিয়ারের ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজির প্রধান যোগেন্দ্র শ্রীরামুলা বলেন, আজকের জীবনে স্মার্টফোনের তাৎপর্য অনস্বীকার্য। তবে, অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। ‘সুইচ অফ’ প্রতিবেদনটির উদ্দেশ্য বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যাতে তাঁরা প্রযুক্তির সুবিধাগুলো ব্যবহার করে প্রিয়জনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়তা করে।
তবে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া একটি অংশ বলছে, তারা ফোনে বিভ্রান্ত না হয়ে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে। জীবনের মান উন্নত হয়েছে স্মার্টফোনে। ফোনে আসক্তি, সম্পর্কে প্রভাবের মধ্যেও ভালো দিকও বেরিয়ে এসেছে। ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ বলছেন, স্মার্টফোন ব্যবহারে কোনো সংবাদ এবং তথ্যের অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারছেন। এ ছাড়া প্রায় সমসংখ্যক মানুষ মনে করছেন, স্মার্টফোন তাঁদের জীবনযাত্রার মান এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, স্মার্টফোনের ব্যবহারে প্রিয়জনদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারছেন। আবার ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ মনে করছেন, তাঁদের কিছু কেনাকাটার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করছে স্মার্টফোন।