
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি ) বিকেলে আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সাথে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র-ডব়্প-এর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবিতে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ডক্টর আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন, এস এম রেজা, এবং অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো আকরাম হোসেন।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডব়্প-এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান। উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাকপণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
সভায় মো. আব্দুস সালাম মিয়া (আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত) বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে অর্ডিন্যান্স আকারে পাশের জন্য সরকারের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া পরিমার্জনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যদের মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ পরিমার্জিত খসড়াটি পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে উপস্থাপন করবে।
ডব়্প তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম বলেন, ১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে ই-সিগারেট/ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম সংশ্লিষ্ট সকল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে গেজেট প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তামাক নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতির একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে জানিয়ে ডব়্প-এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। তবে এখানেই শেষ নয়, তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে সরকারকে ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণও নিষিদ্ধ করতে হবে এখনই।
সভায় বক্তারা বলেন, একটি নির্দিষ্ট জেনারেশন, বিশেষত যুবসমাজ তামাকের করাল গ্রাসের স্বীকার। এদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের বিকল্প নেই। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করার দাবি জানান তারা। আলোচনা সভা শেষে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের কাছে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে ডর্প-এর প্রত্যাশা জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এছাড়াও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির সংশোধনী বিষয়ক প্রস্তাবনাসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের নিকট জমা দেয়ার আহবান জানানো হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির কাছে বিষয়টিকে উপস্থাপন করার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাসও দেয় স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন।
উল্লেখ্য, ডর্প বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় ডর্প বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ এবং তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।