২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য সরকারের বরাদ্দ বেড়েছে চার হাজার ১৩২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে (২০২১-২০২২) এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকায়।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গৃহীত কার্যক্রমসহ কোভিড-পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা প্রস্তাব করছি যা গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা ছিল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জনস্বাস্থ্য ও জনজীবনের ওপর ‘কোভিড-১৯’ অতিমারির প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন অব্যাহত রাখা, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন, স্বাস্থ্যসেবা খাতের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অর্থায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ, যথাসময়ে কোভিড ভ্যাকসিন ক্রয় এবং পর্যায়ক্রমে তা জনসাধারণের মধ্যে প্রয়োগ করার মতো অতি জরুরি পদক্ষেপ আমরা যথাসময়ে গ্রহণ করেছি। ফলে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রেখে মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।
‘পাশাপাশি, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতের কার্যক্রমে অগ্রাধিকার প্রদান করার ফলে জনজীবন সুরক্ষিত রেখে জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।’
মুস্তফা কামাল বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ছয়টি মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের উন্নয়ন পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘মানবস্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস, কর্মসংস্থান, আয় ও অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে কোভিড-১৯ থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার’। বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে জনগণের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা, অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রেখে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সরকার নিরন্তর বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাই হবে সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য। সরকার বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এ গড় আয়ুষ্কাল ৮০ বছরসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন এবং জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ এর কর্মকৌশল অনুযায়ী সর্বস্তরের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নানাবিধ কৌশল গ্রহণ করছে। এর মধ্যে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি গ্রহণ, হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজি (২০১২-২০৩২) প্রণয়ন অন্যতম।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, নাগরিকের সুস্বাস্থ্য ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য করোনা অতিমারির ক্রান্তিকাল সফলভাবে উত্তরণপূর্বক সরকার স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতের উন্নয়নে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করছে যাতে সকল নাগরিক সুলভে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পায় এবং সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে ওঠে। কোভিড-১৯ হতে জনজীবন সুরক্ষার জন্য দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ঈড়ারফ-১৯ ইধহমষধফবংয চৎবঢ়ধৎবফহবংং ধহফ জবংঢ়ড়হংব চষধহ তৈরিতে সে পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বড় ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যেখানে বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতির আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অনুদানসহ ঘাটতি থাকবে দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের আয়ের খাতগুলো থেকে কর বাবদ তিন লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ২৭১ কোটি টাকা।