পিবিএ,ডেস্ক: বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমা বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই এ ক্ষণজন্মা মহা-পুরুষ অত্যন্ত হৃদয় বান ও মানব দরদী ছিলেন। স্কুল জীবন থেকেই তাঁর মধ্যে নেতৃত্বদানের মনোভাব অত্যন্ত জোরালো ছিল। চল্লিশের দশকে তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এঁর সংষ্পর্শে এসে সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। অধিকার আদায়ে আপোষহীন এ নেতা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে আজীবন বাঙ্গালীর হৃদয়ে অম্লান হয়ে থাকবেন। অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর এ জন্য তাঁকে একাধিকবার কারাবরণ করতে হয়, সহ্য করতে হয় অমানসিক নির্যাতন। এরপরও এ মহান নেতা অধিকার আাদায়ের প্রশ্নে কখনই আপোষ করেন নি। সামগ্রীক বিচারে বঙ্গবন্ধু একজন ব্যক্তিই নন, তিনি অনন্য সাধারণ ইতিহাস, নিজগুণে ও কর্মে দেশ ও সমকালিন বিশে^ নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তির দূত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখে ছিলেন, তা বাস্তবায়নে নতুন প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসেবে নিজেদের জীবন গড়ে তুলতে হবে। জ্ঞান-গরিমা, শিক্ষা-দীক্ষা, সততা ও দেশপ্রেম এবং নিষ্টাবোধে জাগ্রত থাকার মাধ্যমে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে সোনার দেশ গড়ার প্রতিটি স্তরকে কাজে লাগিয়ে আগামীতে জাতি গঠনে ও দেশ গড়তে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি মৃত্যুকে ভয় পাইনা। তাঁর কথায়,“ বাংলাদেশের মানুষের জন্মদিনই কি, আর মৃত্যু দিনই কি? যখন কেহ তাদেরকে মারতে উদ্ধত হয় তখন তারা মরে। আর আমি সেই জনতারই একজন।” বঙ্গবন্ধু তাঁর ভক্ত ও অনুরক্তদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন আমার জন্ম দিবসের একমাত্র বক্তব্য, লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলতে থাকবে, সত্য ও ন্যায় আমাদের পক্ষে, জয় আমাদের অনিবার্য। তিনি তাঁর অনুগামীদের সর্বদাই জানাতেন সংগ্রামী আহ্বান।
আধুনিক বিশ্বে সর্বক্ষেত্রেই আছে প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতা হল, অর্থনীতির, শিল্পের, শিক্ষার, জ্ঞানের এবং খেলাধুলার। প্রতিযোগিতা সমূহে অংশ নেয়ার আগে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, চেতনা ও চিন্তাবুকে ধারণ করে নামতে হবে। মনে করতে হবে প্রতিযোগিতায় আমাদের জয় নিশ্চিত; পরাজয় নেই। আমাদের কখনই পিছিয়ে থাকা চলবে না। পরাজয়ের অর্থ আমরা বদলিয়ে দিব। আমাদের কাছে পরাজয়ের অর্থ চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে গেলে জয় আমাদের হাতের মুঠোয় আসবেই। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাদের দেশ হবে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক দেশ। সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান এ দেশের মাটিতে হবে না। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, যারা বাংলাদেশে বসবাস করছে তারা সবাই এ দেশের নাগরিক। তারা সকলেই সম-অধিকার ভোগ করবে। এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, হিন্দু, মুসলমান সবাই সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে। বঙ্গবন্ধু? তাই আজ বলতে হয়, তুমি ছিলে এক অসাধারণ মানুষ। তোমার মত বুঝে উঠার মত মানুষ আমরাও হতে চাই। তুমি ছিলে নির্ভীক, সাহসী এবং মানব দরদী; বাংলার আবাল বৃদ্ধ বণিতার অধিকার আদায়ের শেষ আশ্রয় স্থল। তোমার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন জীবনের লক্ষ্য ছিল বাঙ্গালী জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ম্ক্তু করা। তোমার অবিসংবাদিত নেতৃত্ব সম্মোহনী ব্যক্তিই, ঐন্দ্রজালিক গ্রথিত করেছিল, ফলে বাঙ্গালী জাতি পেয়েছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। বিকাশ ঘটেছে বাঙ্গালী জাতিস্বত্ত্বার। শুধু বাঙ্গালী জাতি বললে হয়ত ঠিক হবে না, বিশে^র সকল নিপীড়িত, শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে তুমিই ছিলে মুক্তির অগ্রনায়ক। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বাঙ্গালী জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এ অবিসংবাদিত নেতাকে জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছিল। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন পরে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুহুান সহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বেই তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধীতে ভূষিত করেছে। এরপর ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ ভাবে জয়লাভ হলে পাকিস্তানীরা বাঙ্গালী জাতির উপর নির্যাতন, জুলুমের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মাত্র ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। এরপর ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে শাসনভার গ্রহণ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের দেশ শাসনের পরই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু কতিপয় পথভ্রষ্ট উশৃঙ্খল সেনা সদস্য কর্তৃক মাত্র ৫৫ বছর বয়সেই স্ব-পরিবারে প্রাণ হারান। তাঁর দু-কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং ছোটবোন শেখ রেহানা সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। আজ ১০ই জানুয়ারি ২০১৯ তোমায় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তোমার দেয়া আদর্শে আগামী পথচলা যেন আরও সুন্দর হয়।
লেখক: মোঃ আব্দুল মান্নান