হজের চূড়ান্ত পর্বের জন্য নিবন্ধন শুরু করেছে সৌদি আরব। দ্বিতীয় এই পর্বে নিবন্ধন ও বাছাই-প্রক্রিয়া চলবে ০৯ জুলাই রাত ১০টা পর্যন্ত। তবে চূড়ান্ত গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করছে— আবেদনকারীর সার্বিক মানদণ্ড, স্থান ও সুযোগ প্রাপ্তির ওপর।
শুক্রবার (২৫ জুন) খালিজ টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদেন এমন তথ্য জানা গেছে।
সৌদিতে অবস্থানরতদের যারা করোনা টিকা নিয়েছে এবং আগে হজে অংশ নেয়নি— এমন সবাইকে এবারের হজে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এছাড়াও হজে অংশ নিতে ইচ্ছুক সবাইকে নির্ধারিত মানদণ্ডে অবশ্যই উত্তীর্ণ হতে হবে বলে জানিয়েছে সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে যে, তারা এই বছর হজের বৈদ্যুতিন পথে নিবন্ধনের দ্বিতীয় ধাপে বিভিন্ন বিভাগে হজের যোগ্যতা অর্জনকারীদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছে। নির্বাচিতদের তাদের তথ্য যাচাই করতে এবং শর্তাদি পূরণ করতে— কেবল পোর্টালে অ্যাক্সেসের প্রয়োজন পড়বে।
হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, যোগ্য হজযাত্রীরা এমন এক সঙ্গীও যুক্ত করতে পারবেন, যিনি পূর্বে হজ নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলেন। পাশাপাশি হজের জন্য নির্ধারিত প্যাকেজগুলো পর্যালোচনা করে উপযুক্ত প্যাকেজ বুক করতে পারবেন।
সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি আবেদন
এর আগে প্রথম পর্বে শেষ দিন পর্যন্ত এই বছর হজে অংশ নিতে সৌদিতে অবস্থানরত ৫ লাখ ৫৮ হাজার ২৭০ জন হজের আবেদন করেন। জানা গেছে, আবেদনকারীদের ৫৯ ভাগ পুরুষ এবং ৪১ ভাগ নারী। এছাড়াও আবেদনকারীদের অধিকাংশের বয়স ৪০ বছরের কম বলে জানা যায়।
এবারের হজ জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে শুরু হবে। শনিবার (১২ জুন) ঘোষণা করা হয়েছিল যে, ৬০ হজযাত্রীকে এবছর হজ পালনের অনুমতি দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, হজ করতে ইচ্ছুকরা অবশ্যই যেকোন দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে মুক্ত থাকার পাশাপাশি তাদের বয়স ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
যারা হজ আদায় করতে পারবে
এরপরে জাতীয় তথ্য কেন্দ্রে সরবরাহিত তথ্যের ভিত্তিতে সিস্টেম অনুযায়ী হজের জন্য আবেদনকারীর যোগ্যতা যাচাই করবে। কোনও আবেদন গৃহীত হয়ে গেলে, আবেদনকারীর বিষয়াদি আরও অনুসন্ধানের জন্য তাকে একটি নিবন্ধকরণ নম্বর দেওয়া হবে। এছাড়াও কোনও আবেদনকারীর কোভিড-১৯ স্থিতি নিশ্চিত করার পরে (সম্পূর্ণরূপে দায়মুক্তি, টিকার প্রথম ডোজের মাধ্যমে নিরাপদ নিশ্চয়তা বা পুনরুদ্ধারের পরে প্রতিরোধ ক্ষমতা ইত্যাদি সম্বলিত) অর্থ প্রদানের বিশদসহ একটি পাঠ্য বার্তা পাঠানো হবে।
সৌদি হজ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজের জন্য নিবন্ধনের অর্থ এই নয় যে— চূড়ান্ত হজের অনুমতি মিলে গেছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বাধ্যতামূলক সব শর্ত ও বিধি পূরণের পর আবেদন গৃহিত হলে— হজ আদায়ের অনুমোদন দেওয়া হবে। এমনকি হজ আদায়ে স্বাস্থ্যবিধি ও নিয়ম-শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করলে— তখন যে কোনও সময় যে কারও আবেদন প্রত্যাখ্যান করার অধিকার মন্ত্রনালয়ের রয়েছে।
হজের আবেদনকারীকে যা নিশ্চিত করতে হবে
হজের আবেদন করার আগে প্রতিটি আবেদনকারীকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা গত পাঁচ বছরে হজ পালন করেনি। তারা কোনও দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন না এবং তারা করোনায়ও আক্রান্ত নয়। এছাড়াও এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, গত ছয় মাসে তারা দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণে বা ডায়ালাইসিস চিকিৎসার জন্য কোনও হাসপাতালে ভর্তি হননি।
হজ আবেদন প্রক্রিয়ার ‘বাছাইপর্ব’ শুক্রবার (২৫ জুন) থেকে শুরু হয়েছে। হজ মন্ত্রণালয়ের এক অফিসিয়াল টুইটের মাধ্যমে জানা যায়, আবেদনকারীরা তাদের প্যাকেজ গ্রহণের সুযোগ বাতিল না হওয়ার জন্য নির্বাচনের তিন ঘণ্টার মধ্যে ফি আদায় করতে হবে।
হজ আদায়ে এবার তিন প্যাকেজ
হজ আদায়ের জন্য অনুমোদিত তিনটি প্যাকেজগুলোর ব্যয় হলো- এক. ১৬ হাজার ৫৬০ সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা)। দুই. ১৪ হাজার ৩৮১ সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা)। তিন. ১২ হাজার ১১৩ সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই লাখ ৭৮ হাজার টাকা)। এছাড়াও প্রতিটি প্যাকেজের সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত করা হবে।
সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট অনুসারে জানা যায়, হাজিদের যাতায়াতে ও পরিবহনের জন্য বাস দেওয়া হবে। যানবাহনে সর্বাধিক ২০ জন হজযাত্রী থাকবেন।
তাদের মিনায় প্রতিদিন তিনবেলা খাবার এবং আরাফাতে দুইবেলা খাবার (প্রাতঃরাশ ও মধ্যাহ্নভোজ) সরবরাহ করা হবে। মুজদালিফায় রাতের খাবার দেওয়া হবে। অন্যান্য খাবার ও পানীয় পরিসেবা তাদের দেওয়া হবে। তবে মক্কার বাইরে থেকে হাজিদের সঙ্গে করে খাবার আনতে দেওয়া হবে না।