করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। এই ভাইরাসের প্রকোপে আজ পুরো বিশ্ব স্তব্ধ। এটা আমাদের কাছে শুধু আতঙ্কই নয়। এই ভাইরাস মরণব্যাথি তাই এটির অভিশাপ থেকে পরিত্রাণের পথের দিশা মিলছে না এখনো। বিশ্ব এই রণক্ষেত্র থেকে বাঁচে ত মরিয়া। কেনোনা এই রণক্ষেত্রের স্থায়ী অস্ত্র মিলছে না। অদৃশ্য রণক্ষেত্র।
ভারতের চিত্র তো সবার চোখে পড়ছেই। ভারতে বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ায় দিশে হারা হয়ে পড়েছিল দেশটি। প্রতিদিন হাজার হাজার লাশের সাড়ি। সৎকারের জন্য স্থান ছিল না শ্মশানগুলোতে। দেশটিতে করোনায় মোট শনাক্তের রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজারের কাছাকাছি। এছাড়াও করোনায় মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ২ হাজার। দেশটির অবস্থা দেথে দেশটির জন্য দোয়া প্রাথনা করেছে বিশ্বব্যাপী মানুষ। বর্তমানে সরকারের কঠোর অবস্থানে সংক্রমণের সংখ্যা মেনে আসে।
ভারত কিন্তু বাংলাদেশ থেকে দূরে নয়। ভারত ঘেঁষা দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতি দেশ। ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটারের এই দেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বসবাস। এতোটুকু দেশে এতো জনসংখ্যা। তাই এদেশে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ খুবই দুষ্কর।
ভারতের না হয় কথা বাদই দিলাম আমাদের দেশেরই রাজশাহীর দিকে কি কারো চোখ পড়ছে? চলতি জুলাই মাসের ৪দিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের কোভিড ইউনিতে মৃত্যু সংখ্যা ৬৪। এ তথ্য গত ২৪ জুলাইয়ের। এটাও কি কিছুই মনে হচ্ছে না? তবে একবার রাজশাহী মেডিকেলের করোনা ইউনিটে গিয়ে ঘুরে আসুন। দেখুন কিভাবে শ^াসকষ্টে ছটপট করতে করতে পরিবার-পরিজনের সামনে মৃত্যু হচ্ছে। কিভাবে অসহায়ের মতো পরিবার-পরিজনসহ চিকিৎসকদের দিকে তাকিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে করোনা রোগীরা। বাঁচানোর এতো যন্ত্রপাতিও কোনো কাজেই যেনো আসছে না। হিমশিম খাচ্ছেন বড়বড় চিকিৎসকরা।
তবুও কি একটু সচেতন হতে পারি না আমরা? করোনা কারো আপন না। কিংবা করোনা ধরবে না বলে বাহাদুরি করারও কিছু নেই। আমার নিজ চোখে দেখা এক ব্যক্তি। যিনি কি না করোনাকালে সবচেয়ে বেশি সতর্ক ছিলেন। বাসা-বাড়ি থেকেও বের হন’নি বহুদিন। ছেলে-মেয়ের তো কথা দুরেই থাকলো। তারা হয়তো আজো বাহিরের চিত্রটি দেখেনি। সেই ব্যক্তি এতো সতর্ক থাকার পরেও বর্তমানে ৫-৭ দিনের অসতর্কতায় তার পরিণতি এখন ভয়াবহ। কষ্ট কাকে বলে তিনি হাড়েহাড়ে টেড় পাচ্ছেন।
আসলে মাস্ক পড়তে আমাদের এতো অনীহা কেনো? মাস্কটি মুখে থাকলে কি খুবই মানসম্মানে লাগে নাকি অন্যকোনো কারণ আছে? আসলে দুঃখজনক বিষয় গত ১ বছর থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্য, জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, এনজিও কর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠন ও এলাকার সচেতন লোকগুলো এতোভাবে মাস্ক পড়ার সুফল ও সঠিক নিয়ম সমন্ধে অবগত করলেও তা কোনো কাজে আসেনি। এতোদিনেও আমরা মাস্ক পড়ার সুফল কি সেটাই ঠিকভাবে বুঝিনি। এছাড়াও যারা প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে পড়ছে তা কি সঠিকভাবে পড়ছেন? মাস্ক দিয়ে নাক-মুখ ঢাকার কথা থাকলেও আমাদের মাস্ক থাকে কোথায়? হয় গলায় ঝুলানো, নয়তো মুখ ঢেকেছে নাক ঢাকেনি বা কারো কারো পকেটে থাকে মাস্ক। কেউ কেউ তো ২ টাকার অনিরাপদ একটি মাস্ক ব্যবহার করছেন মাসের পর মাস। ধূলোবালি আর ময়লায় কালো হয়ে গেছে তবুও সেটি সাথে আছে। কেনো আছে জানেন? ওইযে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে। কেনোনা তারা আটকালে গুণতে হবে জরিমানা। সেই ভয়ে।
দুঃখজনক আরো একটি বিষয়। সেটি হলো আমরা আমাদের নিরাপত্তার কথা আমরাই ভাবিনা। আপনি বাঁচলে কি অন্যের কোনো উপকার আছে? কিন্তু আপনি মারা গেলে আপনার পরিবার পরিজন কাঁদবে। তারা এতিম হবে। তবে আপনার জান বাঁচাতে অন্যেরা এতো মরিয়া কেনো? তাই ভাবছেন তো তাই না? আপনি নিজের ভালো বোঝেন না। অন্যের কি বুঝবেন। আপনি তো শুধু নিজেরটা বুঝলেন যে আমি আক্রান্ত হলে হবো। কিন্তু আপনার কারণে যে আরো মানুষ আক্রান্ত হবে সেটা তো ভাবেন না। সরকার আপনাদেরকে বাঁচাতে এতো ভাবছে আর আপনারা বলছেন এগুলো সরকারের নাটক। বললাম তো আপনি বাঁচলে অন্যের কোনো লাভ নাই। তবুও সরকারের দায়িত্ব দেশবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। সেই দায়িত্ব থেকেই আপনার ভালোর জন্য এতো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলেই, আজো আমরা ভালো আছি। আমরা লকডাউনে ত্রাণ পাচ্ছি। বিভিন্ন সহায়তা পাচ্ছি। যেখানে অন্যান্য দেশগুলো করোনা প্রতিরোধের টিকা পাওয়ার জন্য হাহাকার করছে সেখানে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশের মানুষের কথা ভেবে টিকা এনে বিনামূল্যে দিচ্ছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেউ টিকা থেকে বাদ পড়বে না। কারো ঘর খাবার শূন্য থাকবে না। সবার ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া হবে। এতো সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরেও কেনো স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা? কেনো লকডাউনে প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে লুকোচুরি খেলা? যদি এখনো নিজেদের ভালোটা নিজেরা না বোঝেন তবে ভয়াবহ পরিণতি ঘটতে আর বেশি দেড়ি নাই। করোনার সংক্রমণ দিনদিন ছড়িয়ে পড়ছে চারিপাশে। এভাবেই চলতে থাকলে লাশের সাড়ি দেখতে বেশি দিন বাঁকি নাই। যখন দেখবেন আপনার পরিবারের কেউ আপনার সাথে ছটপট করে মারা যাচ্ছে। কিন্তু আপনার করা কিছুই থাকছে না তখন বুঝবেন। আসুন সচেতন হই। নিজের জিবনের দাম না দিলেও মানুষের জীবনের সাথে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করি। দেশের মানুষকে বাঁচাতে সরকারকে সহযোগিতা করি।
লেখক : প্লাবন শুভ শিক্ষার্থী, কলামিষ্ট ও গণমাধ্যমকর্মী