হাঁস পালনে আক্তারের ভাগ্য বদল

পিবিএ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় দেশীয় পদ্ধতিতে হাঁস পালন করে ভাগ্য বদল করেছেন মো: আক্তার হোসেন। দৃঢ় মনোবল, কঠোর পরিশ্রম আর সঠিক ভাবে পরিচর্যা করতে পারলে অল্প পুঁজিতেই খুব সহজে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তিনি যেন এখন এক উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। দু:খের দিন শেষ হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখ শান্তিতেই কাটছে তার দিন।
উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ গ্রামে আক্তার হোসেন বিশাল আকারে ২টি হাঁসের খামার গড়ে তুলেন। তার গড়ে উঠা একটি খামারে হাঁসের ডিম অপরটিতে ছোট হাঁস বড় করে বিক্রি করছেন তিনি । টানা ৭ বছর ধরে চলছে তার এ ব্যবসা। এই দুটি খামার থেকে প্রতি মাসে তিনি দেড় লাখ টাকার উপর আয় করছেন বলে জানান। এদিকে তার এই হাঁস পালন সাফল্য দেখে এলাকায় অনেকেই খামার করে হাঁস পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
আক্তার হোসেন বলেন, আজ থেকে ৮ বছর পূর্বে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই নিজ বাড়িতে তিনি কৃষি কাজ করতেন। কিন্তু সার কীটনাশক , শ্রমিক মজুরিসহ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি বছর কৃষিতে তার লোকসান গুনতে হয়। এ নিয়ে তিনি অনেকটাই হতাশায় ভোগছিলেন। এদিকে পরিবারে অভাব অনটন ও যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে আছে। পরিবারের কথা চিন্তা করে এরমধ্যে তিনি ঢাকার কালিগঞ্জে এক বন্ধুর বাড়িতে চলে আসেন। সেখানে তিনি বেশ কিছু দিন হাঁস খামারে কাজ করেন। সেখান থেকে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে এক পর্যায়ে উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ গ্রামে চলে এসে প্রথমে ৪শ হাঁস দিয়ে একটি খামার গড়ে তুলেন। প্রথমেই ডিম ও হাঁস বিক্রিতে তার ভাল টাকা আয় হয়। এরপর তার সাহস ও মনের জোর বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যায়ক্রমে ২টি বিশাল খামার গড়ে তুলেন।
আক্তার হোসেন বলেন, গত ৩ মাস পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নতুন করে ১দিনের হাঁসের বাচ্ছা ২৫-৩০ টাকা করে ৩ হাজার ক্রয় করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পূর্বে অতিরিক্ত শিলা বৃষ্টিতে এরই মধ্যে ১৫ শ হাঁস মারা যায়। বর্তমানে তার দুটি হাঁস খামারে ৩ হাজার হাঁস রয়েছে। এরমধ্যে ডিম পাড়া ১৫শটি এবং ৩ মাস বয়সী ১৫শটি হাঁস তার রয়েছে । ডিম দেওয়া ১৫শ হাঁসের মধ্যে ১হাজারের উপর প্রতিদিন ডিম দিচ্ছে। স্থানীয় বাজারে ৮শ টাকা শ বিক্রি করা হয়। এক একটি হাঁস ৫-৬ মাস পযর্ন্ত ডিম দেন। তারপর ওই হাসগুলো বাজারে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি ডিম ছাড়া হাঁসগুলো ৩-৪ মাস লালন পালন করে বিক্রি করা হয়। ইতিমধ্যে বিক্রি শুরু করা হয়েছে। এক একটি হাঁস ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ডিম ও হাঁস বিক্রিতে খরচ বাদে প্রতি মাসে আয় হচ্ছে দেড় লক্ষ টাকার উপর।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। নিচু এলাকার জমিগুলোতে বৃষ্টি ও বর্ষার পানি আসতে শুরু করেছে। তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খাল বিল ও পানি থাকা জমিতে হাঁসগুলোকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । যেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেখানে একটি ঝাপটে ঘর তৈরী করা হয়। ওই ঘরে রাতের বেলায় হাঁসগুলো রাখা হয়। সকাল হলে পুনরায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পানি উঠা জমিগুলো থেকে ঝিনুক শামুক,ধানসহ বিভিন্ন প্রকারের খাবার খেয়ে সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বেই তাদের আশ্রয় স্থলে আনা হয়। তাছাড়া গম, কুড়া,ধানসহ বিভিন্ন প্রকার খাবার দেওয়া হয়। গত ২ মাসে তার ৪টি জায়গায় স্থান তার বদল করা হয়।
তিনি বলেন খাল বিল জমি ও জলাশয়ে পানি থাকলে খবার ও কম লাগে অনেক টাকা ও বেচে যায়। কিন্তু পানি না থাকলে অনেকটা সময় বাড়িতে লালন পালন করতে হয়। খাবার ও অতিরিক্ত দিতে হয়।
এই খামারে তার ভাগ্যের চাকা বদলে দেওয়ায় এলাকার যুবকরাও উৎসাহিত হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার এখন স্বপ্ন দেখছেন। তার হাঁস খামারে পরিবারের সদস্যরা রাত দিন পরিশ্রম করলেও দেখাশুনার জন্য নিয়মিত ৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। খামারে হাঁেসর ছোট খাট কোন সমস্যা হলে নিজেই সমাধান করে থাকেন। বড় কোন রোগ বালাই হলে তাৎক্ষনিক ভাবে স্থানীয় পশু সম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে ডাক্তারের শরনাপন্ন হন বলে জানান।
আক্তার হোসেন বলেন, ছোট বেলা থেকেই হাঁস খামার কারর প্রতি যতেষ্ট ইচ্ছা ছিল। সময় সুযোগ না থাকায় করা সম্ভব হয়নি। হাসঁ খামার করা সহজ কাজ হলে এতে অনেক ঝুঁকিও রয়েছে। কারন খামারে মরক লাগতে পারে। তবে সচেতন থাকলে ঝুঁকি এড়িয়ে ভাল মুনাফা করা যায়। তিনি বেকার যুবকদেরকে বলেন হতাশার কিছু নেই। কোন কাজকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সঠিক ভাবে শ্রম দিলে হাঁস পালনের মধ্যদিয়ে বিদেশী টাকার চেয়েও বেশী উপর্জন করা সম্ভব।
তাকে অনেকে অনুসরন করে হাঁস খামার গড়ে তুলাই তিনি খুশি।
আখাউড়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: কামাল বাশার বলেন এ উপজেলায় অনেকেই খামার করে হাঁসপালনের মাধ্যমে লাভের মুখ দেখছেন। খামারি ও পালনকারিদেরকে রোগ বালাই থেকে রক্ষা পেতে সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

পিবিএ/কাজী সুহিন/এসডি

আরও পড়ুন...