খোরশেদ আলম শিমুল, পিবিএ হাটহাজারী(চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবাধে কৃষি জমির টপ সয়েল (জমির উপরি ভাগের উর্বরা অংশ) কেটে বসতভিটা ও পুকুর ভরাট কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব মাটি। ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গগুলি দেখিয়ে এক শ্রেণির দালাল ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে উজাড় করছে। ফলে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন ও ফসল বৈচিত্র্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার শিকারপুর দক্ষিন মার্দাশা,ফরহাদবাদ,ধলয়,মির্জাপুর চারিয়া ইজতিমা মাঠের পুর্বে,পশ্চিম মেখল খোয়াজ চৌধুরী বিল,নাঙ্গল মোড়া,১নং দক্ষীন পাহড়তলী ওর্য়াড,হাটহাজারী পৌর সদরে বিভিন্ন এলাকায় এক্সকাভেটর দিয়ে কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বরা অংশ কেটে ট্রাক-ট্রলি করে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর এসব মাটি যাচ্ছে
বসতভিটা ও পুকুর ভরাট কাজেও এঁটেল মাটির ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাটি কাটার গভীরতার পরিমাণ ৫ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় যে কোনো ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটির এই অংশেই যে কোনো ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসলটি প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করে। এই অংশটি একবার কেটে নিলে সে জমির আর মৃত্তিকা প্রাণ থাকে না। এমনকি ওই জমিতে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে কোনো ফসল বেড়ে উঠবে না। এতে জমিটি পরিত্যক্তই হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, এবারের শুকনো মৌসুমের শুরুতে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেশ কয়েকটি স্থানে টপ সয়েল বিক্রি রোধে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়।এছাড়া মাটি কাটার সরঞ্জাম জব্দসহ নগদ টাকা জরিমানা আদায় করেন। তারপরেও কিছুতেই থামছে না মাটি ব্যবসায়ী দুর্বৃত্তদের অপতৎপরতা। ইটভাটা ও বসতভিটায় টপ সয়েলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের (জমির মালিক) বিভিন্ন কৌশলে প্রলুব্ধ করে সামান্য অর্থের বিনিময়ে তা উজাড় করছে। ফলে কৃষকরা ধরে রাখতে পারছেন না তাদের জমির স্বাভাবিক ফলন।
জানা যায়, কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার কারণে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস, আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামসহ বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি হচ্ছে। অন্যদিকে চলাচলে নিষেধ থাকলেও মাটি ভর্তি ভারি ট্রাক, ড্রাম, ট্রাক ও ট্রলি চলাচল করায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
শিকারপুর লালা চন্দ্র বিল এলাকায় মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক মোহাম্মদ রহিম(৩৫) বলেন, দিনমজুর হিসেবে কাজ করে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি পায়। মাটি ব্যবসায়ীরা আমাদের কাজে নিয়ে আসছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ ওয়াহেদ বলেন, সাধারণ কৃষকদের অসচেতনতার সুযোগে এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষি সম্পদের সর্বনাশ করছে। এ ব্যাপারে মাঠ পরিদর্শন করে শিগগির কৃষকদের বুঝানোর চেষ্টা করা হবে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন জানান, মাটি কাটার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পিবিএ/কেএএস/জেডআই