হাতের আংটি দেখে মেয়ের লাশ সনাক্ত করেন বাবা


পিবিএ,বগুড়া: ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার তানজিলা মৌলি মিথি (২৪) নিহতের ঘটনায় উপজেলাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। মাত্র ৮ মাস আগে মিথি বিয়ে করেছিল ইউ এস বাংলার এয়ার লাইনে কর্মরত রায়হানুল ইসলাম রিমনকে। পরিবারের সকলেই শোকে পাথর হয়ে আছে। কেউ কোন কথা বলছে না। শুধু মিথির ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। মিথির ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশি থেকে শুরু করে সবাই শোকে কাতর। এভাবে মিথির চলে যাওয়াটা কেউ মেনে নিতে পারছে না।

নিহত মিথি আদমদীঘির সান্তাহার পৌর শহরের বশিপুর সরদার পাড়া মহল্লার অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদের এক মাত্র কন্যা। মিথির অকাল মৃত্যুতে সান্তাহার পৌর শহর জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত মিথির পারিবারিকভাবে জানা যায়, এফআর টাওয়ারে আগুনের সময় আটকা পরে মিথি বাবা ও তার স্বামীকে ফোন করেছিল। ফোনে সে বলেছিল, তাদের ১০ তলা অফিসে আগুন লেগেছে। আগুন আর ধোয়ায় তারা কিছু দেখতে পারছে না। আগুনে আটকা পড়ে আছি। আমাকে বাঁচাও আমি বাঁচতে চাই। বগুড়া থেকে মিথির বাবা যখন গিয়ে ঢাকায় পৌঁছিলেন ততক্ষণে মিথির আগুনে পোড়া নিথর দেহ ছিল কুর্মিটোলা হাসপাতালে। পরে তার ভোটার আইডি কার্ড ও হাতের আংটি দেখে মিথির লাশ সনাক্ত করেন। প্রথমে লাশ ঢাকা মিরপুরে নিয়ে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে বগুড়ার সান্তাহারে বাদ জুম্মা দ্বিতীয় নামাজা জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।
মিথির চাচা সালাউদ্দিন সরদার পিবিএ’কে জানিয়েছে, মিথি ঢাকায় একটি ট্যুরিজম কোম্পানি রত চাকুরি করতেন। রাজধানীর মিরপুরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী রিমনকে নিয়ে থাকতেন। ৮ মাস আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। মেয়েটা মাত্র ৮ মাস সংসার করেছে। অনেক কিছু গোছানোর বাকি ছিল তার। সংসারটা আরো ভালভাবে করতে সে নিজেও চাকুরী করতো। আগুনে আটকা পড়া মিথি তার বাবা কে ফোন করেছিল আর ফোন করেছিলো তার স্বামী রিমনকে বলেছিলো ‘আমাদের অফিসে আগুন লেগেছে আমি আগুনে আটকা পড়ে আছি’। ‘আমাকে বাঁচাও আমি বাঁচতে চাই’।

কিন্তু কিছুই করার ছিল না। বাবা বগুড়ার সান্তাহার থেকে যখন ঢাকাতে পৌঁছেছে ততক্ষনে তানজিলা মৌলি মিথি কুর্মিটোলা হাসপাতালে পুড়ে যাওয়া মরদেহ ছিল। মিথির বিয়ে হয়েছে মাত্র ৮ মাস আগে। তার স্বামী রায়হানুল ইসলাম রিমন চাকুরি করেন ইউ এস বাংলা এয়ার লাইন্সে। মিথি নিজেও চাকরি করেন ট্যুরিষ্ট এ্যান্ড হেরিটেজ নামের কোম্পানিতে। এফ আর টাওয়ারের ১০ তলায় অফিস। তানজিলা মৌলি মিথি সান্তাহার হার্ভে সরকারী বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ ইং সালে এস.এস.সি পাশ করে। পরে ঢাকায় গিয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বিবিএ ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। মিথির বাড়ি আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের বশিপুর সরদার পাড়া মহল্লায়। তার বাবা মাসুদুর রহমান মাসুদ পেশায় একজন আইনজীবী।

পিবিএ/এইচএ/হক

আরও পড়ুন...