হাদিসের আলোকে বরকতময় মাহে রমজান

পিবিএ ডেস্ক: চলছে বছরের শ্রেষ্ঠ মাস পবিত্র মাহে রমজান। মর্যাদাপূর্ণ এই মাসে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য রেখেছেন অফুরন্ত নিয়ামত। কোরআনের ভাষায়, ‘হে নবী, আপনি বলুন! এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমতেই হয়েছে। সুতরাং এতে তারা যেন আনন্দিত হয়। তারা যা কিছু সঞ্চয় করে, এটা তার চেয়ে উত্তম।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৫৮)

মহান আল্লাহ তাআলা এই পবিত্র মাসকে যেসব গুণ ও মর্যাদার মাধ্যমে মহিমান্বিত করেছেন, তার পূর্ণ বিবরণ কোরআন মজিদ ও হাদিসের বিভিন্ন কিতাবে এসেছে।

নিম্নে ফজিলতপূর্ণ এই মাসের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করছি।

মুসলমানদের জন্য সর্বোত্তম মাস

রমজানের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) চমৎকার বলেছেন, আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে গোটা বছরের জন্য ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা এতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৬৮)

কোরআন অবতীর্ণের মাস

রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাস। এ মাসেই আল্লাহ তাআলা পূর্ণ কোরআন মজিদ লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ করেন। কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা রমজানের পরিচয় ও গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে সর্বপ্রথম এই বৈশিষ্ট্যের কথাই উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, যে মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুপথপ্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই এর রোজা রাখে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

সিয়াম ও কিয়ামের মাস

রমজানের প্রধান মূল দুটি আমল হচ্ছে, দিনের বেলায় রোজা রাখা এবং রাতের বেলায় কিয়াম তথা ২০ রাকাত তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করা। রোজা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী মুত্তাকি-পরহেজগার হতে পারো। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রমজান) পাবে, সে যেন অবশ্যই তার রোজা রাখে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩-১৮৫)

রাতের কিয়াম সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৭)

রহমতের মাস

আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহে এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদের করা হয় শৃঙ্খলাবদ্ধ। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রমজান আরম্ভ হলে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৯)

জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং দোয়া কবুলের মাস

রমজানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজ অনুগ্রহে এই মাসে অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং তাদের দোয়া কবুল করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন রমজান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে—হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৮৭৯৪)

অন্য হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রতি রাতেই তা হয়ে থাকে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৩)

অধিক কোরআন তিলাওয়াত ও দানশীলতার মাস

রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা এবং সাদকাহ করা। কারণ আমাদের প্রিয় নবীজি এই মাসে এ দুটি কাজ খুব বেশি বেশি করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং তাঁরা একে অন্যকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬)

পিবিএ/এমএসএম

আরও পড়ুন...