হার্টের ফুটো নিয়ে মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে শিক্ষার্থী

পিবিএ,কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে হতদরিদ্র পরিবারের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নীতু চন্দ্র দাস’র (১৪) হার্ট আর দশজনের মতো স্বাভাবিক বাম দিকে না হয়ে ডান দিকে রয়েছে। বিরল এই ঘটনার ভাগিদার নীতু’র হার্টটি জন্মগতভাবে ফুটো হওয়ায় এখন সে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। বাবা ছোট্ট চা-বিস্কুটের দোকানদার গোবিন্দ দাসের পক্ষে ছেলের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সাধ্যের বাইরে।

ফলে অসহায় এই পরিবারটি তাকিয়ে আছে সরকারি প্রশাসনসহ বৃত্তবানদের দিকে। তার চিকিৎসক জরুরী ভিত্তিতে অপারেশনের তাগিদ দিলেও চিকিৎসার ব্যয় প্রায় ২ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় তাকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কুড়িগ্রাম শহরের কালিবাড়ি মন্দিরের পিছনের গলিতে চা ব্যবসায়ী গোবিন্দ চন্দ্র দাস জানান, জন্মগতভাবে ছেলের হার্টটি ডানদিকে অবস্থিত। জন্মের পর থেকেই দুর্বল ছিল সে।

হার্টের ফুটো নিয়ে মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থী নীতু চন্দ্র দাসের পরিবার

একটু পরিশ্রম করলেই হাঁফিয়ে উঠত। টাকা-পয়সার অভাবে ভাল ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয় নাই। ফলে স্থানীয় ডাক্তারদের চিকিৎসায় চললেও তার সমস্যা দিনদিন যেন বেড়েই যাচ্ছিল। পরে গুরুতর অসুস্থ্য সন্তানকে ২০১৮ সালে রংপুরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ঢাকার জাতীয় হ্নদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক (কার্ডিওলোজি) ডা: মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে দেখালে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার হার্টটি শরীরের ডানদিকে রয়েছে এবং সেটি ফুটো থাকার কারণে তাকে দ্রুত ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে অবস্থিত নারায়ণা হ্নদরোগ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।

কিন্তু দরিদ্র পিতার পক্ষে খরচ বহন করা সম্ভব না হওয়ায় তার উন্নত চিকিৎসা এখন আটকে আছে। কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার খানপাড়ায় একটি পুরোনো আমলের হাফবিল্ডিং ঘরে বসবাস পরিবারটির। দুই শতক জমিতে অবস্থিত এই বাড়িটিই তাদের শেষ সম্বল। ছেলে নীতু চন্দ্র দাস (১৪) অর্থনৈতিক কারণে খালাত বোন জামাইয়ের কাছে থেকে জেলার চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নে অবস্থিত রাধাবল্লভ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। ছোট বোন নীলা রানী দাস (৯) কুড়িগ্রাম ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

নীতু চন্দ্র দাসের মা মিনা রানী দাস জানান, জন্মের পর থেকেই ছেলেটি দুর্বল ছিল। এখন সারাক্ষণ বুক ধরফর করে, নিশ^াস বন্ধ হয়ে যায়, পীঠের মধ্যে হানাহানি করে। সারাক্ষণ জ¦র থাকে, বেশি পরিশ্রম করতে পারে না। একটু খেলেই বমি করে ফেলে। এই সন্তানকে নিয়ে আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি।

ইতিমধ্যে তার চিকিৎসার জন্য দুটি বেরসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৮ হাজার টাকা ঋণ করা হয়েছে। যা রংপুরে চিকিৎসা করতে শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের কাছে কোন টাকা-পয়সা নাই। আমরা এই সন্তাকে কিভাবে বাঁচাবো। এখন আপনাদের সহযোগিতা ও কলাণ্যে সন্তানটি পৃথিবীতে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে পারবে।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা: এস.এম আমিনুল ইসলাম পিবিএকে জানান, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় হ্নদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা যেতে পারে। এছাড়াও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিবারটিকে অর্থ সহায়তা দেয়া যাবে।

পিবিএ/এমআইবি/আরআই

আরও পড়ুন...