পিবিএ ডেস্কঃ ‘দ্য ভিঞ্চির’ খ্যাতি সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচারের জন্যে। আসলে দ্য ভিঞ্চি একটা বিশেষ রোবোট টেকনোলজির নাম। এর সাহায্যে বড় কোনও কাটাকুটি ছাড়াই নিখুঁত ভাবে সার্জারি করে হার্নিয়ার হাত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
প্রচলিত পদ্ধতিতে ৬-৮ ইঞ্চি কেটে হার্নিয়া মেরামত করা হয়। প্রচুর রক্তপাত হয় বলে জটিলতার ঝুঁকি থাকে। আর রোগীর সেরে উঠতে অনেক সময় লাগে। অথচ হার্নিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নেতাহই কম নয়। আর হার্নিয়ার একমাত্র চিকিৎসা সার্জারি।
তিন জন হার্নিয়ার রোগীকে রোবোটিক সার্জারির সাহায্যে নিয়ে হার্নিয়া সারানো হল। বেলজিয়ামের একটি হাসপাতালের রোবোটিক হার্নিয়া সার্জারির অগ্রণী চিকিৎসক ফিলিপ মুসমস হাতেকলমে রোবোটিক নিরাময় সম্পর্কে ওঁর অভিজ্ঞতার কথা জানান।
কেমন করে করা হয় এই সার্জারিঃ বিভিন্ন ধরণের হার্নিয়ার মধ্যে ইনগ্যুইনাল হার্নিয়া তুলনামূলক ভাবে পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এছাড়া কোনও অস্ত্রোপচারের পর ইনসিসনাল হার্নিয়া, আম্বিলিক্যাল হার্নিয়া-সহ নানা ধরণের হার্নিয়া হয়। আসলে পেশির দুর্বলতা বা অন্য কারণে অন্ত্রের কোনও অংশ স্থানচ্যুত হয়ে গেলে তাঁকে আমরা ‘হার্নিয়া’ বলি। কুঁচকিতে অথবা নাভির কাছে কিংবা পেটের কোনও অংশে হার্নিয়া হতে পারে। হাঁচলে, কাশলে বা চিৎকার করলে ফোলা অংশ দেখা দেয়। তা স্বাভাবিক অবস্থাতেও থাকে না। এই সমস্যার একমাত্র চিকিৎসা সার্জারির সাহায্য নেওয়া। পেশির আলগা হয়ে যাওয়া অংশে সূক্ষ্ম তারের জালি বা মেস লাগিয়ে দেওয়া হয়। নিয়মিত ভারী জিনিস তুললে, জোরে চাপ দিয়ে মল-মূত্র ত্যাগ করলে, সার্জারির পর, সন্তানধারনের সময়, স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ওজন, ক্রনিক কাশি ইত্যাদি কারণেও হার্নিয়া হতে পারে।
হার্নিয়ায় ব্যথা থাকলে ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বৃদ্ধি পেলে অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন। নইলে স্ট্র্যাঙ্গুলেশন হয়ে জীবনহানির ঝুঁকি থাকে। তাই হার্নিয়া সার্জারি করিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওপেন সার্জারির (পেট কেটে) মাধ্যমেই করা হয়। অবশ্য বেশ কয়েক বছর হল ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করে হার্নিয়া সারানো হচ্ছে। এই রোবোটিক সার্জারি ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিরই উন্নততম রূপ।
ইতিমধ্যে অবশ্য কলকাতায় দ্য ভিঞ্চি রোবোটিক পদ্ধতিতে হার্নিয়া সার্জারি হয়েছে। কিন্তু এ বার থেকে এই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত রোবোটিক সার্জারি করা হবে বলে জানালেন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ।
কী এর বৈশিষ্ট্যঃ বিশেষজ্ঞের মতে, যে ওপেন সার্জারিতে অনেক বড় করে পেট কাটা হয়। সেই জায়গায় রোবোটিক সার্জারিতে ৩ টি ছোট্ট পিন হোল করে (১২ মিমি থেকে ৮ মিমির মধ্যে) হার্নিয়া মেরামত করা হয়। প্রায় ছয় সপ্তাহ লাগত ওপেন হার্নিয়া সার্জারির পর সেরে উঠতে। রোবোটিক পদ্ধতিতে সার্জারির পর রোগী এক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবেন। পেট কাটার কারণে হার্নিয়া ফিরে আসার ঝুঁকি থাকত, রোবোটিক সার্জারিতে হার্নিয়া ফিরে আসার ঝুঁকি অনেক কম।
খরচঃ বর্তমানে এই চিকিৎসার প্রচলন কম থাকায় খরচও একটু বেশি। আপাতত এই অস্ত্রোপচারের খরচ পড়বে ৩ লক্ষ টাকা। তবে ঠিকঠাক প্রচার ও ঘন ঘন ব্যবহারে আশা করা যায়, ভবিষ্যতে রোবোটিক সার্জারির খরচ মধ্যবিত্ত মানুষের আরও নাগালের মধ্যেও আসবে।
পিবিএ/এমআর