হালদা নদীতে ডিম ছাড়েনি মা মাছ, চলছে যান্ত্রিক নৌযান

পিবিএ,খোরশেদ আলম শিমুল, হাটহাজারী: প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়েনি। গত দুই দিনে শত শত ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা ও জাল নিয়ে অপেক্ষার পরও ও মা মাছ ডিম না দেওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তবে হালদা নদীতে মা মাছের আনা গোনা রয়েছে। তবে অনেকের ধারণা নদীতে যান্ত্রিক নৌযান, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তলোন করার কারনে মা মাছ ডিম দিচ্ছে না। প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে রাতের অন্ধকাওে নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালি উত্তোলনের পাশাপাশি ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে দিন-রাত বালু পরিবহন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে।

হালদা নদীতে ডিম ছাড়েনি মা মাছ
হালদা নদী

ফলে বিপন্ন হচ্ছে হালদা নদীর মৎস্যকুল।ধবংস হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্র ও তাদের আবাসস্থল। এদিকে গত দুই মাসে নদীতে ৬টি মা মাছের মৃত্যু নিয়ে শঙ্কায় ডিম সংগ্রহারীরা। এদিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন গত ৭ মাসে হালদা নদীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এক লক্ষ দশ হাজার মিটার ঘেরা ও ভাসা জাল উদ্ধার করে।

ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে হালদা নদীতে মা মাছের আনা গোনা বেড়েছে। গত কয়দিন হালকা বৃষ্টি ও বজ্রপাত হলেও মা মাছ ডিম ছাড়েনি। তবে রবিবার মা মাছ অল্প নমুনা ডিম দেয়ে । নমুনা ডিম দেয়ার পর শত শত ডিম সংগ্রহকারী শনি ও রবিবার দিন রাত নৌকা ও জাল নিয়ে হালদা নদীর হাটহাজারীর গড়দুয়ারা, মাদার্সা, দক্ষিণ মাদার্শা, আমতুয়া, রামদাশ হাট, মাছুয়া ঘোনা ও রাউজানের অংকুরী, ঘোনা, পশ্চিম গহিরা, বিনাজুরী, কাগতিয়া, কাসেম নগর, আজিমের ঘাট, গোলজার পাড়া, মগদাই, নাপিতের ঘাট, পশ্চিম আবুর খীল, উরকিরচর, খলিফার ঘোনা,মোকামী পাড়া, এলাকায় হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহের জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ করার পর মাটির কুয়ায় ডিম থেকে রেনু ফোটানোর জন নদীর তীরে মাটির কুয়া ও হ্যাচারী প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।

রবিবার হালদা পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম চলাকালে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হালদা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন ও যান্ত্রিক নৌযান চলাচল করছে অবাধে। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে প্রতি বছরের চৈত্র মাস থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত সময়ে মা মাছ ডিম ছাড়ে। হালদা নদীর তীরবর্তী হাটহাজারী ও রাউজান এলাকার মৎস্যজীবি, জেলে, ডিম সংগ্রহকারীরা হালদা নদী থেকে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করে।

নদী থেকে সংগ্রহ করা ডিম নদীর তীরে মাটির কুয়ায় রেখে ও সরকার কর্তৃক নির্মিত হ্যাচারিতে ডিম থেকে রেনু উৎপাদন করে। হালদা নদীর মা মাছের ডিম থেকে উৎপাদিত রেনু দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৎস্যজীবি, মৎস্য খামারীরা ক্রয় করে নিয়ে মাছ চাষ করে। হালদা নদীতে রুই, মৃগেল, কালিবাউশ মাছ ডিম ছাড়ে বেশি। হালদা নদীর মা মাছের ডিম থেকে উৎপাদিত রেনু মাছ চাষ করে মৎস্যজীবী ও মৎস্য খামারীরা লাভবান হয় বেশি। এক সময়ে হালদা নদীতে মা মাছ প্রচুর পরিমাণ ডিম ছাড়তো।

জানা যায়,হালদা নদীর নাজির হাট থেকে কালুর ঘাট পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার দৈঘ্য নদীতে চৈত্র থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হালদা নদীর নাজির হাট থেকে কালুর ঘাট পর্যন্ত ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, নগরীর মোহরা এলাকায় স্পটে ড্রেজার দিয়ে ও যান্ত্রিক নৌকায় করে বালু উত্তোলন করছে এলাকার প্রভাবশালি ব্যক্তিরা। এতে মা মাছের প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে। হালদা নদীর নাজির হাট থেকে কালুর ঘাট পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীতে সারা বছর মা মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হলেও হালদা নদীর বিভিন্ন এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বড়শি ও জাল দিয়ে মাছ শিকার চলছে।

বর্তমানে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার জন্য আনাগোনা করছে। গত দুইদিনে হালদা নদীতে হাটহাজারীও রাউজানের কয়েক শতাধিক ডিম সংগ্রহকারী ও জেলে বৃষ্টি ও বজ্রপাত উপেক্ষা করে নদীতে নৌকা ও জাল নিয়ে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করার জন্য নদীতে গেলেও মা মাছ ডিম না ছাড়ায় ডিম সংগ্রহকারীরা হতাশ হয়ে পড়ে।

মার্দাশা মাছোয়াঘোনা ও গড়দুয়ার পুরা আলী স্লুইস গেইট এলাকার ডিম সংগ্রহকারী শফিউল আলম ও মোঃ হারুন বলেন, বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হলে হালদা নদীতে নৌকা নিয়ে আমার লোকজনসহ আমি নদীতে ডিম সংগ্রহের জন্য যায়। মা মাছ ডিম না ছাড়ায় হতাশ হয়ে ফিরে আসি। হালদা নদীতে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালি উত্তোলনের পাশাপাশি ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে দিন-রাত বালু পরিবহন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করার কারনে গত দুই মাসে ৬টি মা মাছ মারা গেছে।

এদিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন,হালদা নদীকে রক্ষা করার জন্য যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এক লক্ষ দশ হাজার মিটার ঘেরা ও ভাসা জাল উদ্ধার করি। এছাড়া ইঞ্জিনচালিত নৌকা জব্ধ করে নষ্ট করে দেওয়া হয়।তিনি বলেন,উত্তর মার্দাশা মাছুয়াঘোনার ৪৬ টি হ্যাচারীর মধ্যে ৩০ টি বিগত ৪/৫ বছর ধরে নষ্ট ছিল। এতে করে ৪৬ টি কুয়ার কাজ চালাতে হতো ১০ টি বা ১৫ টি দিয়ে।এতে করে প্রচুর ডিম নষ্ট হত।বর্তমানে নষ্ট হ্যাচারী সচল করা হয়েছে।

প্রায় হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন ও যান্ত্রিক নৌযান চলাচল করার বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.আজহারুল আলম বলেন,হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে বালু উত্তোলন বন্ধে ও যান্ত্রিক নৌযান চলাচল বন্ধে সংশি¬ষ্ট উর্দ্ধত্বন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমানে বৃষ্টি হলে মা মাছ এই তিথিতে অবশ্যই ডিম ছাড়বে। এখন শুধু হালদা নদীর মা মাছগুলো অপেক্ষায় রয়েছে বৃষ্টির জন্য।

পিবিএ/আরআই

আরও পড়ুন...