শেখ হাসিনার পতন হজম করতে পারছে না ভারত সরকার। তাই অপপ্রচারে মেতেছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও তার সহযোগীরা। ভারতের এই আচরণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হুমকি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার (১ ডিসেম্বর) নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে শান্তির অভাবনীয় এক স্বর্ণদ্বার উন্মোচিত হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার পতন হজম করতে পারছে না ভারত সরকার। অতিমাত্রায় দাদাগিরি করার ফলে ভারতের সঙ্গে তার প্রত্যেক প্রতিবেশীর সম্পর্ক তলানিতে। বিগত ১৫ বছর হাসিনাকে সামনে রেখে ভারত বাংলাদেশকে কার্যত দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশকে আবার কীভাবে তাদের করতলে নেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যেই তারা নীলনকশা করছে। ভারতের সরকার মনে করে, বাংলাদেশকে অষ্টম সিস্টার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তাদের সেভেন সিস্টার্স নিরাপদ থাকবে। একজন স্বৈরাচারের পতন নিয়ে কোনো দেশের এমন আহাজারি বিশ্বে বিরল। ভারতের কতিপয় গণমাধ্যম বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বানোয়াট গল্প প্রচার ও প্রোপাগান্ডা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বর্তমান বয়ান মিথ্যার ধোঁয়াজাল দিয়ে ঘেরা। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার জন্য ভারত উঠেপড়ে লেগেছে। প্রতিদিন বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারত সরকার এবং উগ্রবাদী বিজেপির নেতারা বক্তব্য-বিবৃতি হুংকার এবং অভিযোগ করেই চলেছে। কলকাতায় আমাদের উপ হাইকমিশনে উগ্রবাদী হিন্দুরা আক্রমণ চালিয়েছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে ভারতীয় গোয়েন্দারা আওয়ামী লীগ ও বিশেষ একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠিকে কিভাবে ব্যবহার করছে সেই পরিকল্পনার ছক প্রকাশ্যে এসেছে। তাদের যে কোনো ভিত্তি নেই, তার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি ভয়েস অফ আমেরিকার (ভিওএ) করা একটি জরিপে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৪.১ শতাংশ মনে করেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে।
একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রিজভী বলেন, ভারতে ২৫০টিরও বেশি গির্জা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ভারতের মুসলিম, খৃস্টান ও শিখ সম্প্রদায় যৌথভাবে সাম্প্রদায়িকতার হুমকির সম্মুখীন। হিসাব করলে দেখা যাবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ভারতে। তারাই আবার বড় গলায় বলছে বাংলাদেশে নাকি সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এদিকে বিতর্কিত এক ধর্মীয় নেতা চন্দন কুমার ধর ওরফে চিম্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মাচারীর অনুসারী হিন্দু জঙ্গীরা তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে আইন অমান্য করেছে, আদালত অবমাননা করেছে। ভারত সরকার এই বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেনি।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে বিএনপি প্রতিবন্ধক বলে প্রচার করছেন যা সঠিক নয়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা, না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সরকারের। বিএনপির ওপর দায় চাপানো দুঃখজনক।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।