বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে নতুন নতুন ক্ষেত্র উদ্ভাবনে একমত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। শনিবার (২০ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তারা এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন।
ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়। এ নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয়। আমাদের এখন দ্রুত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) যাওয়া উচিত। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে যৌথ ফিজিবিলিটি স্টাডি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।’
বেসরকারি সেক্টরের অংশগ্রহণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের পাওয়ার সেক্টরে বিনিয়োগ করেছে। আমরা শ্রীলঙ্কান বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এবং হাইটেক পার্কগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই। ধান চাষ, স্বচ্ছ পানির মাছ চাষসহ কৃষি ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপরও জোর দেয়া দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার বাজারে বাংলাদেশের অনেক পণ্যের উজ্জল সম্ভবনা আছে।’
এ সময় দুই দেশের সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উপকূল, অ্যাকুয়াকালচার, গভীর সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ আহরণ বিষয়ে শ্রীলঙ্কা থেকে প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন বিষয়ে আমাদের আগ্রহ আছে। সক্ষমতা অর্জন, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা দরকার।’
শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশি নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য পেশাদারদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বিশ্বমানের ওষুধ আমদানি করে শ্রীলঙ্কা লাভবান হতে পারে।’
জরুরি রেসপন্স, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমন বিষয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বিনিময় করার আগ্রহ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি পারস্পরিক লাভের জন্য কৃষি, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নিতে নিয়মিত সাক্ষাৎ ও বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপগুলো নিয়মিত হওয়া উচিত।’ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গুরুত্বসহকারে দেখে। আগামী বছর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হবে।
এ সময় শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা ঘনিষ্ট বন্ধু।’ আগামী বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রীলঙ্কা সফরের আমন্ত্রণ জানান মাহিন্দা রাজাপাকসে।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ডিজিটাল দেশে রূপান্তরের প্রশংসা করে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সেক্টর বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের ব্লু-ইকোনোমি ধারণার প্রশংসা করেন এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন মাহিন্দা রাজাপাকসে।
বাংলাদেশের দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা থেকে অভিজ্ঞতা অর্জনে আগ্রহ প্রকাশ করেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। করোনা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
শ্রীলঙ্কান প্রতিনিধিদলে ছিলেন দেশটির শিক্ষামন্ত্রী জিএল পিরিস, রুরাল হাউজিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল ইন্ডাস্ট্রিজ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইন্দিকা আনুরুদ্ধ, বাটিক, হ্যান্ডলুম ফেব্রিক অ্যান্ড লোকাল অ্যাপারেল প্রোডাক্টস বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দায়াসিরি জায়াসেকারা, মানি অ্যান্ড ক্যাপিটাল মার্কেট অ্যান্ড স্টেট এন্টারপ্রাইজ রিফর্মস বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আজিথ নিওয়ারড কাবরাল, আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তারক বালাসুরিয়া, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সচিব গামিনি সেদারা সেনারাথ।
এর আগে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসলে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য তারা একান্তে বৈঠক করেন। এরপর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।
এর আগে শুক্রবার (১৯ মার্চ) দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই তার এ সফর। সেদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনারও প্রদান করা হয়।
শনিবারের সফরসূচি অনুযায়ী রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে বিকেল ৫টায় বঙ্গভবনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তিনি সেখানে দর্শনার্থী বইতে স্বাক্ষর করবেন।