পিবিএ,ঝিনাইদহ: নাছরিন আক্তার নামে এক নারী হিজড়াকে বিয়ের ফাঁদে ফেলে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় লুসানুর রহমান (লুসান) নামে এক যুবক ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হিজড়া নাছরিনের ১০/১৫ বছরের অর্জিত আয় ও জমানো টাকা আত্মসাৎ করে তাকে পথের ফকির বানিয়ে ছেড়েছে প্রতারক লুসান। লুসান এখন দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে সংসার করছেন আর প্রথম স্ত্রী নাছরিন আক্তার স্ত্রীর মর্যাদা ও আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধারের দাবীতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
বুধবার দুপুরে তথ্য প্রমান দিয়ে এমনটাই দাবী করেছেন নারী হিজড়া নাছরিন আক্তার। জানা গেছে, ২০১৩ সালে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে নারী হিজড়া নাছরিনের সঙ্গে পরিচয় হয় শৈলকুপা উপজেলার বিজুলিয়া গ্রামের খাসিয়ার রহমানের ছেলে লুসানের। লুসান তখন তেজগাঁও পলিটেকনিকে পড়তেন। নাছরিনের আদি বাড়ি খুলনা হলেও তিনি মানিকগঞ্জ উপজেলার শিবালয় উপজেলার নিহন্দ গ্রামে বসবাস করেন। তার পিতার নাম আব্দুল গাফফার শেখ। পরিচয় থেকে পরিণয়ের দিকে গড়ায় নাছরিন লুসানের সম্পর্ক।
২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারী নোটারি পাবলিকে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে হয়। নাছরিণের ভাষ্যমতে বিয়ের আগে ও পরে স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে লুসান ব্যবসার কথা বলে ১৫ লাখ নিয়েছেন। পরে আরো ৪ লাখ টাকা নেন লুসান। পিতার বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করেও টাকা দিয়েছেন নাছরিন। সেই টাকা দিয়ে লুসান গ্রামে পাকা গরুর গোয়ালসহ ঘরবাড়ি, একাধিক গরু এবং বন্ধক রাখা জমি খালাস করেছেন। টাকা নেওয়ার পর স্বামী লুসান এড়িয়ে চলতেন নাছরিনকে।
ধার গ্রহণের টাকা চাইলে লুসান তালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। টাকার জন্য ঘুরতে থাকলে লুসান বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি ও সে কোন টাকা নেয়নি বলে অস্বীকার করতে থাকে। নিরুপায় হয়ে নাছরিন স্বামী লুসানের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জের আদালতে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন যার নং সিআর-১৬৮/১৯। মামলা করার পর লুসান নিজেকে মুক্ত করতে সংসার করার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে সুকৌশলে নাছরিনের দায়ের করা মামলা ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর তুলে নিতে সক্ষম হন। মামলা তুলে নেওয়ার পরই লুসানের আসল চরিত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। নতুন করে প্রথম স্ত্রী নাসরিনের সাথে সংসার শুরু করার প্রয়োজন দেখিয়ে আবারো চার লাখ টাকা হাতিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী‘র নাসরিণের সাথে বসবাস শুরু করেন।
এরপর থেকেই প্রথম স্ত্রী নাছরিনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন লুসান। নাসরিনের আত্মীয় স্বপন জানায়, নাসরিন ও লুসান কলকাতা বেড়াতে গিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে নাসরিনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। মাথায় আঘাত করে নাসরিনকে ঘরে ফেলে দুই লাখ টাকা নিয়ে চম্পট দেয় লুসান। এ ব্যাপারে লুসানের ০১৯৬৬২৮০৮৪১ নাম্বারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তবে শৈলকুপার মনোহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, লুসানের সঙ্গে নারী হিজড়া নাছরিনের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর বিজুলিয়া গ্রামে এসে ছিল নাছরিণ। তিনি বলেন, শুনেছি লুসান নাছরিণের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বহু টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষটি বড়ই অসহায়। নাছরিন ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে বিচার দিলে আমি ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবো।
পিবিএ/আতিকুর রহমান/এসডি