আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই-আগস্ট মাসেই নয়, বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই গুম-খুন ও হত্যার বীভৎসতা সৃষ্টি করে। হিটলারের সময়ের ক্যাম্পের মতো ক্যাম্প তৈরি করে তাতে নিষ্ঠুরভাবে বন্দদের নির্যাতন করা হয়েছে। তারা শুধু গণহত্যাই করেনি, নির্যাতনের যত রকম পন্থা রয়েছে সবই বাস্তবায়ন করেছে, যা হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানি শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তাদের মধ্যকার ১৩ জনকে আজ অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। আগামী দিনে যারা ফ্যাসিস্ট হতে চান, তাদের জন্য আজকের দিনটি একটি শিক্ষার দিন। মানবতাবিরোধী অপরাধ করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না, বিচারের মুখোমুখি হতে হয় তা আজকের দিনের এক বড় শিক্ষা।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিকরণ, দলীয়করণের মাধ্যমে একটি নিপীড়ক সংস্থায় পরিণত করা হয়েছিল,সে স্টোরি আমরা আদালতে তুলে ধরেছি। একটি পরিবারকে ক্ষমতায় রাখার উদ্দেশ্যে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড এছাড়া নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল।
আজকের সব অপরাধের প্রধান দায় শেখ হাসিনার। জুলাই অভ্যুত্থানে ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে টার্গেট ভিত্তিতে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এর তদন্ত সমাপ্ত করে বিচারের উপযোগী একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে আমরা ২ মাস সময় চেয়েছিলাম, আদালত ১ মাস সময় মঞ্জুর করেছেন।
আয়না ঘর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্যাম্পে নিয়ে গুম, খুনের ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসী বাহিনীর ক্যাম্পগুলোর সঙ্গে তুলনীয় ছিল বিগত সরকারের গুম-খুনের ঘটনা। তারা শুধু যে গণহত্যা করেছে শুধু তাই নয়।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, এক নম্বর আসামি শেখ হাসিনা, তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন। আমাদের পক্ষ থেকে ফরমাল আবেদন পাঠিয়েছি ইন্টারপোলের কাছে। রেড নোটিশের মাধ্যমে তাকে পেলে যেন গ্রেফতার করা হয়। তবে এর বাইরেও পদক্ষেপ রয়েছে, যেহেতু মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ রয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত যে চুক্তি তার মূলে শেখ হাসিনা ফেরত চাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার চিন্তা করছেন বলে রোববার প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেছেন। সুতরাং সেই প্রক্রিয়াতেও বাংলাদেশ যাচ্ছে। এটা আমরা আদালতের কাছে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, ডিফেন্সের পক্ষে বেশ কয়েকজন আইনজীবী তাদের ওকালতনামা দাখিল করেছেন তবে তাদের পক্ষ থেকে শুধু একজনের জন্য পিটিশন ছিল। সেই পিটিশনটি ছিল অভিযোগের কপি সরবরাহ করা সংক্রান্ত। কিন্তু পিটিশনটি যথানিয়মে দাখিল করা হয়নি। সুতারাং পিটিশন হিসেবে সেটি গণ্য হয়নি। ভবিষ্যতে তিনি যদি করেন সেটার ব্যাপারে আদালত যথাযথ আদেশ দেবেন।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণহত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক ৯ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিবকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত ১৭ অক্টোবর পৃথক দুই আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।