পিবিএ, জাবি: `প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবাসভূমি’ খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় সবুজ প্রকৃতির ক্যাম্পাস। পড়াশোনা ও শিক্ষা, গবেষণার পাশাপাশি দেশজুড়ে সুনাম রয়েছে এখানকার অতিথি পাখি, প্রজাপতি, লাল-নীল শাপলা, কাঠবিড়ালি, বেজি, সাপ, কীটপতঙ্গ, ক্যাম্পাসজুড়ে গাছ-গাছালির বিচারণ আর বাহারি রঙের ফুলের প্রকৃতি নিয়ে। প্রতিদিন প্রকৃতিপ্রেমী হাজারো দর্শনার্থীদের আগমনে মুখরিত থাকে পুরো ক্যাম্পাস এলাকা। কিন্তু, গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র আগুন দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে সবুজ প্রকৃতি। এতে প্রকৃতি বিনষ্টের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যা ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য হুমকী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিবছরের মতো এবছরেও একটি অসাধু কুচক্রী মহল ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ধধংসের পায়তারায় নেমেছে। থেমে নেই কুচত্রী মহলের দৌরাত্ন। বেড়েই চলেছে তাদের খামখেয়ালীপনা। ফলে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠ সুন্দর পরিবেশ ধধংসের মুখে পড়েছে।
খোজঁ নিয়ে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের সুইমিং পুল, মীর মশাররফ হল সংলগ্ন এলাকা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, খেলার মাঠ সংলগ্ন মন্দির এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিশাল এলাকাজুড়ে সবুজ প্রকৃতি পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। অপ্রয়োজনে আগুন দিয়ে বুনো পাখি ও কীটপতঙ্গের বিচরণ স্থল ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এদিকে অতিথি পাখির বিচরণস্থল লেকগুলোও দিন দিন ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন লেকের পার্শ্ববর্তী ঝোপ-জঙ্গল কেটে ফেলা হয়েছে। আগুন দিয়ে ঝোপঝাড় পুড়িয়ে ফেলায় কমেছে বিশাল সবুজ প্রকৃতির এলাকা।
একাধিক প্রত্যক্ষ্যদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ঝাড়ুদার ও কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ ক্যাম্পাস পরিস্কার রাখার নামে বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন ছোট ছোট জঙ্গলে আগুন দিয়ে থাকেন। প্রতি বছর বসন্তকাল আসার মুহুর্তে দেখা যায় ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতি ধ্বংস করার এ দৃশ্য। এদিকে বিশ্ববিবদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন এলাকায় এক কর্মচারী জঙ্গল পরিস্কারের নামে শুকনো ঘাস ও ঝোপে আগুন ধরিয়ে দেয় ফলে বিশাল এলাকা পুড়ে যায়। এমন চিত্র দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকটি জায়গায়। এ নিয়ে ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রকাশ্যে সরব হলেও বন্ধ হয় নি এই কর্মকান্ড। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয় নি কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ।
ক্যাম্পাসে ঝোপঝাড় বন পুড়িয়ে ফেলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় ঝোপঝাড়ের বিকল্প নেই। এ বছর লেকের ধারের ঝোপঝাড় কেটে ফেলায় ও বিভিন্ন স্থান পোড়ানোর কারণে অতিথি পাখি কমেছে। প্রতি বছর এমনটি চলতে থাকলে এক সময় ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতি হারিয়ে যাবে যা জীববৈচিত্র্যর জন্য ব্যাপক হুমকি।’
জঙ্গলে আগুন দেওয়ায় ঝোপঝাড়ে থাকা উপকারী কীটপতঙ্গ ও বাস্তুসংস্থানও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। বিষয়টি নিয়ে এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বনজঙ্গল পোড়ানোর নির্দেশনা কাউকে দেওয়া হয় নি। কোথাও এ ধরনের কোনো খবর পেলে আমরা যতটুকু পারি বন্ধ করার চেষ্টা করি। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক। যে বা যারা এ ধরনের কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।’
পিবিএ/এসআরএস/জিজি