হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে ট্রান্স ফ্যাট

পিবিএ ডেস্ক: বাংলাদেশে হৃদরোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে প্রাকৃতিক বা শিল্প উৎস থেকে আসা অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের (ট্রান্স ফ্যাট) উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের হার ২ শতাংশ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। হৃদরোগজনিত মৃত্যুর হার ৩৪ শতাংশ বাড়ে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসক দ্বীনে মুজাহিদ মো. ফারুক ওসমানী দৈনিক জাগরণকে বলেন, নতুন করে হৃদরোগে আক্রান্তদের উপর বহু গবেষণায় স্পষ্ট বেরিয়েছে, ওই আক্রান্তরা ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাদ্যে অভ্যস্ত ছিলেন। নিয়মিত খাদ্য তালিকা থেকে ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার কমিয়ে দিলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক হ্রাস পাবে।

প্রাকৃতিক ট্রান্স-ফ্যাটের মধ্যে রয়েছে- দুধ, মাখন, ঘি, গরুর মাংস, ছাগলের মাংসের মতো প্রাণীজ উৎস। অতিরিক্ত মাত্রায় এসব গ্রহণ করা হৃদপিণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। শিল্পক্ষেত্রে উদ্ভিজ তেলের হাইড্রোজেনেশনের সময় ট্রান্স ফ্যাট উৎপন্ন হয়। আংশিকভাবে হাইড্রোজেনেটেড তেলই শিল্পে উৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস বলে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

এদিকে, সিঙ্গারা, সমুসা, পুরি, বিস্কুট, চানাচুর, চিপস, বেকারিতে তৈরি খাদ্যসামগ্রী, কোমল পানীয়তেও হাইড্রোজেনেটেড তেল ব্যবহার করা হয়, যা গ্রহণ করলে দেহে ট্রান্স ফ্যাটের প্রবেশ ঘটে। রাস্তায় বিক্রি করা কড়াভাজাপোড়া খাদ্য, ফাস্টফুডেও প্রচুর ট্রান্স ফ্যাট থাকে। ঘরে বা বাইরে রান্নার কাজে ব্যবহৃত একই তেল বারবার ব্যবহার করলে তাতেও ট্রান্স ফ্যাট উৎপাদিত হয়।

২০১৫ সালে ঢাকাস্থ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কড়া করে ভাজা খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ নির্ণয় করতে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। এ গবেষণায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ১০টি বিস্কুটের মধ্যে ৫ থেকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাটের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
পরে বাংলাদেশে ট্রান্স ফ্যাট নিয়ে আর কোনো গবেষণা করা হয়নি ।

২০০৯ সালে ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই) আংশিকভাবে হাইড্রোজেনেটেড তেলে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়। ২০১৫ সালে এফএসএসএআই ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নিয়ে আসে। অথচ বাংলাদেশ এখনও ট্রান্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণের পথে যাত্রাই শুরু করেনি।

বিএসএমএমইউ হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসক দ্বীনে মুজাহিদ মো. ফারুক ওসমানী দৈনিক জাগরণকে বলেন, ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত থাকা সবার আগে দরকার। পাশাপাশি খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট কী পরিমাণে দেয়া উচিত সে সম্পর্কে একটি গাইড লাইন প্রণয়নও প্রয়োজন।

পিবিএ/বিএইচ

আরও পড়ুন...