দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্প্রতি তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এরপর এ সংগঠনটি নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা ও সমালোচনা।
একে একে গ্রেফতার হন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। সবশেষ এবার সংগঠনটির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার (২৫ এপ্রিল) হাটহাজারী মাদ্রাসায় এক সভা শেষে এ ঘোষণা দেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
তিনি বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের পরামর্শক্রমে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।
আগামীতে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে আবার হেফাজত কমিটির কার্যক্রম শুরু হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমীর এবং নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে ঘোষণা করা হয়েছিল ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট হেফাজতে ইসলামের এ কমিটি।
আল্লাম আহমদ শফি হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতাকালীন আমীর হলেও এই কমিটিতে তার সব অনুসারীকেই বাদ দিয়েছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী।
এমনকি আল্লামা আহমদ শফি মারা যাওয়ার মাত্র দুমাসের মধ্যেই তড়িঘড়ি করে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটি গঠনের কয়েকমাসের মধ্যেই মারা যান মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী। এরপর সংগঠনটির পুরো নেতৃত্ব নিয়ে নেয় যুগ্ম মহাসচিব এবং খেলাফত মজলিস নেতা মামুনুল হক।
প্রথমে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তুলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
সর্বশেষ গত ২৬ শে মার্চ দেশজুড়ে ব্যাপক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন হেফাজত ইসলামের অংশটি। পরে ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্ট থেকে নারীসহ স্থানীয় জনগণ মামুনুল হককে আটক করে।
আর মামুনুলের রিসোর্ট কাণ্ড নিয়ে হেফাজত চরম বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়ে। এর মধ্যে ১৮ এপ্রিল ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি মাদ্রাসা থেকে পুলিশ মামুনুল হককে গ্রেফতার করে। বর্তমানে তিনি পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন।
বিগত ২০১০ সালে নারী নীতির বিরোধীতা করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আত্মপ্রকাশ করে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসে সংগঠনটি।
কিন্তু সাংগঠনিক বিরোধের জের ধরে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয় আল্লামা আহমদ শফিকে।
পরদিনেই তিনি ঢাকায় মারা যান। আর এরপরই হেফাজতের নেতৃত্ব চলে যায় জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মামুনুল হকের হাতে। শেষ পর্যন্ত নানামুখী চাপে সেই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।