মোঃ ওয়াদুদুর রহমান, অধ্যক্ষ, সিরাজউদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন এন্ড কলেজ : ‘ফজরের নামাজ পড়ে সবে মাত্র সালাম ফিরিয়েছি, টেবিলের উপর রাখা মোবাইল ফোনটি সজোরে বেজে উঠলো। আঁতকে উঠলাম, কোন দুঃসংবাদ নয় তো !!
ফোন উঠালাম, কানে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কথা শোনার আগেই কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। অপরপ্রান্ত হতে আমার এক শিক্ষক কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানালেন, আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন এন্ড কলেজের শিক্ষক, আমার অতি প্রিয় জনাব আনিসুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
কেমন করে কখন কিভাবে মারা গেলেন আনিস সাহেব ? ফোন করলে অপরপ্রান্ত থেকে অপরিচিত এক কন্ঠ থেকে জানানো হলো, “তিনি গত পাঁচ দিন যাবত জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন এবং স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করছিলেন। গত রাত এগারোটার দিকে হঠাৎ শরীর খারাপ হতে থাকে এবং একই সঙ্গে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে রাত আনুমানিক ১.২০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।”
কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি ! চরম অসহায়ত্ব বোধ করি। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলি এরপর মানবিক সহযোগিতার জন্য হাজী কছিম উদ্দিন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রিয় ছোট ভাই এম এম হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে, তার করোনা স্বেচ্ছাসেবক টীমের সাহায্য প্রার্থনা করি ।
তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন যে, তার মা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ডাক্তারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা সেরে, মাকে এক নজর দেখেই চলে আসবেন বলে জানান । আমার মনটা দ্বিগুণ বেদনায় আরও নীল হলো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট প্রার্থনা করলাম, “হে আল্লাহ, রত্নগর্ভা এ মহীয়সী মাকে তুমি সুস্থ করে আবার তার সন্তানদের মাঝে ফিরিয়ে দাও ।”
মানবসেবা ও দায়ীত্বশীলতার উদাহরণ যদি বলি, এর চেয়ে অনন্য উদাহরণ আর হতে পারে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই অসুস্থ মা’কে হাসপাতালের বিছানায় রেখে চেরাগ আলী মার্কেটের সুর তরঙ্গ রোডে তার স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়ে ছুটে আসেন এবং অত্যন্ত মমতা ভরে, নিজের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে, আমার অতি প্রিয় সহকর্মী আনিসুর রহমানের মরদেহ ভবনের পাঁচতলা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করে নামিয়ে এনে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেন। অ্যাম্বুলেন্স আনিসুর রহমানের নিথরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির দিকে যাত্রা করে।
যেখানে আনিস সাহেবের আপনজন দায়ীত্ব নিতে ভয় পায়, সেখানে সেই ভয় কে জয় করে এক অনন্য নজির স্থাপন করেন হাজী কছিম উদ্দিন ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান প্রিয় ছোট ভাই এম এম হেলাল উদ্দিন ও তার দল।
একদিন হয়তোবা এ মহামারী করোনা থেকে আমরা নিশ্চয়ই মুক্তি পাব। পৃথিবী ও আবার ফিরে যাবে তার স্বাভাবিক নিয়মে। তখনও মানব সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নিয়ে অবশ্যই এম এম হেলাল উদ্দিন ও তার স্বেচ্ছাসেবক দলের অবদানের কথা মানুষের হৃদয় পটে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
আমি আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, বিশেষ করে গভর্নিং বডির সম্মানিত সভাপতি জননেতা জনাব এডভোকেট মোঃ আজমত উল্লা খান ও আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে জনাব এম এম হেলাল উদ্দিন ও তার স্বেচ্ছাসেবক দলের সকল সদস্যের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট তাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর নিকট আমার প্রিয় শিক্ষকের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি ও তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আমিন ।।
পিবিএ/এমএ