১৭৬ বছর ধরে লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত কাটা মাথাটি কার!

পিবিএ ডেস্ক: প্রায় দুই শতাব্দি ধরে এটি সংরক্ষিত রয়েছে লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমিক্যাল থিয়েটারে কাচের জারে।সে ঘটনা আরও ভয়ানক ও লোমহর্ষক।আসলে মাথাটি কার কেনই বা রাখা হয়েছে কাচের জারে সংরক্ষিত করে।

সে ইতিহাস জানতে হলে চলে যেতে হবে অষ্টাদশ শতাব্দিতে। ১৮১০ সালে স্পেনে এক গরিব পরিবারে জন্ম হয় এক ছেলে সন্তানের। নাম রাখা হয় দিয়াগো আলভেজ। খাবারের খরচ যোগতে ১৯ বছর বয়সেই স্পেন ছেড়ে পর্তুগালে পাড়ি জমায় দিয়াগো।

কিন্তু পর্তুগালে এসে একেবারে ব্যর্থ হয় সে। এতো কম বয়সে বলার মতো কোনো চাকরি খুঁজে পায় না সে।

হন্যে হয়ে কাজ খুঁজে বেরিয়েও প্রতিদিনই খালি হাতে ফিরতে হতো তাকে। প্রতিরাতেই ক্ষুধা আর হতাশায় ঘুম হতো না তার। সেই হতাশা কাটাতে একদিন নেশার জগতে ঢুকে পড়ে দিয়াগো। আর সেখান থেকে অপরাধ জগতে নাম লেখায়।

প্রথমে ছোটখাটো অপরাধ করানো হতো তাকে দিয়ে। অপরাধের বিনিময়ে মাদক ও খাবার পেতে থাকে সে। প্রথম দিকে ছিঁচকে চোর ছিল দিয়াগো। এরপর বড় ধরনের ডাকাতি ও রাহাজানিতে সিদ্ধ হস্ত হয়ে ওঠে তার হাত। এসব করতে গিয়ে কয়েকটি খুন করে ফেলে দিয়াগো। এভাবেই ধীরে ধীরে সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠে সে।

লিসবনের ইতিহাস বলছে, সে সময় সারাদিন কাজ করে মজুরিসহ নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারত না কৃষকরা। রহস্যজনকভাবে গ্রাম থেকে প্রতিদিনই কৃষক নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছিল। এভাবে নিখোঁজের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছিলই।

প্রথমে নিখোঁজ বলে চালিয়ে দেয়া হলেও পরে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আটঘাট বেঁধে নামে।সে সময় কৃষকদের এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি গোটা লিসবনে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। আতঙ্কে সন্ধ্যার পর কেউ বাড়ি ফিরত না।

এ সময় লিসবনের এক সনামধন্য চিকিৎসক ও পরিবার দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন। সেই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ধরা পড়ে দিয়াগো আলভেজ।এর পরই বেরিয়ে আসে চার বছর ধরে লিসবনের গ্রামগুলোর নিখোঁজ কৃষকদের রহস্য।

জানা যায়, এসব কৃষককে দিয়াগো ও তার গ্যাং খুন করে।

চৌকস পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে একটি, দুটি নয় ১৮৩৬ থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যে ৭০টি খুন করে দিয়াগো।

আদালতে দিয়াগো স্বীকার করে, সারাদিন কাজ শেষে কৃষকরা যখন বাড়ি ফিরতেন, লিসবন নদীর সেতুতে ওৎ পেতে থাকত সে। কৃষকদের লুট করে তাদের খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিত সে।

তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে লিসবনসহ সারা পর্তুগালে।

কীভাবে এত নিষ্ঠুরতার সঙ্গে খুন করত দিয়াগো, তা জানতে উত্সুক হয়ে ওঠে মেডিকেল সার্জিক্যাল স্কুল অব লিসবনের বিজ্ঞানীরা। তার মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করার জন্য ফাঁসির পর দিয়াগোর মাথা কাটা হয়।

কেমন পাষণ্ড ছিল দিয়াগো সেই রহস্য ভেদে মনযোগী হয় বিজ্ঞানীরা। যদিও সে রহস্য এখনও উন্মোচন হয়নি।

তবে দিয়াগোর সেই রহস্যময় কাটা মাথা এখনও লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমিক্যাল থিয়েটারে কাচের জারে সংরক্ষিত রয়েছে।

পিবিএ/সজ

আরও পড়ুন...