পিবিএ,নীলফামারী: ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল অশুভ আতাতের ফসল। এই ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত কারো জন্যই শুভ নয়, এটি কোন কল্যাণই বয়ে আনবেনা। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনও ছিল একতরফা। যা দেশের ইতিহাসে কলংকময় অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ইতোপূর্বেও অনেক নির্বাচন একতরফাভাবে হয়েছে। তবে সেগুলোতে নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে কিছুদিনের মধ্যেই আবারও নির্বাচন দিয়েছিল। কিন্ত ২০১৪ সালের নির্বাচনে গঠিত সরকার তা করেনি। বরং কথা দিয়েও তারা কথা রাখেনি। এধরণের দৃষ্টান্ত গণতন্ত্রের জন্য চরম হুমকি স্বরুপ।
উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি ২৩ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সুজন সৈয়দপুর উপজেলা কমিটি আয়োজিত বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও নাগরিক ভাবনা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে সরকার, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে অত্যন্ত অশুভ আতাত হয়েছিল নিবাচনকে একতরফাভাবে নিজেদের পক্ষে নেয়ার ক্ষেত্রে। এ কারণেই ভোট কেন্দ্রগুলো ভোটার শুন্য ছিল। জনগণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তথা নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বর্তমান সময়ে মানুষ চরম অস্থিরতার মধ্যে বসবাস করছে। ন্যুনতম নাগরিক অধিকার নেই কারই। কোন দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হলে সে দেশে নানা অনিয়ম ও অরাজকতার বিস্তার ঘটে। এর ফলে সার্বিক রাষ্ট্রযন্ত্র দূর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। যার সুযোগ নিয়ে বিপথগামী চক্র প্রভাব বিস্তার করে পুরো রাষ্ট্রকে করায়ত্ব করতে তৎপর হয়।
সম্প্রতি শ্রীলংকায় সংঘটিত সিরিজ বোমা হামলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমাদের দেশেও যদি গণতান্ত্রিক সুব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা না হয় তাহলে এমন ঘটনার পূণ:রাবৃত্তি ঘটার সমুহ আশংকা রয়েছে। যা কারো জন্যই ভালো হবেনা। তাই অনতিবিলম্বে চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সংস্কার করতে হবে। এজন্য নাগরিকদের ভাবনাগুলোকে একত্রিক করে সে অনুযায়ী একটি প্রস্তাবণা তৈরী করে তা সরকারসহ রাষ্ট্রের সকল রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের কাছে প্রেরণ করা হবে। সে জন্যই আজকের এই মতবিনিময় সভার আয়োজন।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনে প্রারম্ভে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সে সাথে গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনভাবে কাজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ গণমাধ্যমগুলোর উপর সরকারের করাল গ্রাস রয়েছে। তা থেকে মুক্ত হতে হবে। আর এজন্য সর্বস্তরের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। একাজটি বেগবান করার জন্যই মূলত: সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন সুজনের সৃষ্টি। তিনি এক্ষেত্রে সৈয়দপুরের সকল নাগরিককে সুজনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার আহবান জানান।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সুজন সৈয়দপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী (অব:) নুরুজ্জামান জোয়ারদার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সৈয়দপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সময় টিভির নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি সাকির হোসেন বাদল, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একরামুল হক, সাধারণ সম্পাদক এমএ করিম মিষ্টার, প্রথম আলো প্রতিনিধি এমআর আলম ঝন্টু, দৈনিক নয়া দিগন্ত ও ফটো বাংলা এজেন্সির প্রতিনিধি মো: জাকির হোসেন, সাপ্তাহিক নীলফামারী চিত্র সম্পাদক মকসুদ আলম, নীল সমাচার নির্বাহী সম্পাদক ওবায়দুল ইসলাম, নর্থ বেঙ্গল অনলাইন নিউজ পোর্টাল এর সম্পাদক মেহেরুন নেসা, বিএনপি নেতা আব্দুল খালেক, পৌর মহিলা কাউন্সিলর জাহানারা বেগম প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক খোলা কাগজ প্রতিনিধি এম এ মোমেন, চ্যানেল এস প্রতিনিধি সাদিকুল ইসলাম সাদেক, দৈনিক দেশের পত্র জেলা প্রতিনিধি শাহজাহান আলীসহ মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
পিবিএ/জেএইচ/হক