পিবিএ, ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ। এর কয়েক ঘন্টা আগে ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করল বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোট।
বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলো এবং ২০ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা কে কোন আসনে জোটের হয়ে ভোট করবেন তার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপি।
শুক্রবার রাতে দলের প্রার্থীদের আংশিক চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে বিএনপি। আর গতকাল শনিবার জাতীয় ঐক্যফন্ট ও ২০ দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এতে দেখা গেছে, ৩০০ আসনের মধ্যে ৫৭ আসনে জোটের শরিকদের ছাড় দিয়েছে বিএনপি।এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের ৩৮টি আর ঐক্যফ্রন্টের শরিদের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে ১৯টি আসন। শনিবার রাতে এ সংক্রান্ত চিঠি শরিক ও ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচনে লড়বেন। শুধু ২০ দলের শরিক এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ নিজ দলের ‘ছাতা’ প্রতীকে ভোট করবেন।
জানা গেছে, বিএনপির দুই জোটে দল রয়েছে ২৭টি। এর মধ্যে ২০ দলে ২৩ দল। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে দল আছে চারটি।
শরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসনে জামায়াতকে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। ২০ দলীয় শরিকদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে ২২টি আসন দেয়া হয়েছে।যদিও জামায়াতকে আসন বণ্টনের শুরুতে ২৫ টি আসনে ছাড় দেয়ার কথা ছিল।এ নিয়ে জামায়াতে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা বড় হয় যাওয়ায় ২০ দলকে কিছু আসন কম দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।স্বভাবতই জামায়াতের আসন বেশি হওয়ায় তাদের থেকে তিনটি আসন ছেটে ফেলা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা আগেই বলে রেখেছিলেন দুই জোটের শরিকদের সর্বোচ্চ ৬০টি আসন দেয়া হবে।এর মধ্যে জামায়াত-ই সর্বাধিক আসন পাবে সেটিও মোটামুটি নিশ্চিত ছিল।
বিএনপি নেতারা শুরুতে চেয়েছিলেন ৪০ থেকে ৪২ টি আসন দেয়া হবে ২০ দলকে। আর ১৫ থেকে ১৮টি আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দেয়া হবে।২০ দলের সঙ্গে এটি নিয়ে বিএনপির এক ধরণের সমঝোতাও হয়ে গিয়েছিল।
সবশেষ সেই হিসেবে গোল বাধে যখন ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলো বিএনপির সঙ্গে দরকষাকষি শুরু করে।তাদের প্রার্থী তালিকা ছিল অনেক বড়।তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতা হচ্ছিল না।
এ কারণে প্রার্থী তালিকা প্রকাশও দেরি হয় জোটের। কয়েক দফা সময় দিয়েও কথা রাখতে পারেন নি জোট নেতারা।
অবশেষে ঐক্যফ্রন্টকে ১৯ টি আসন দিয়ে সন্তুষ্ট করেছে বিএনপি।ঐক্যফ্রন্টকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে ২০ দলের প্রার্থী তালিকা ছেটে ফেলতে হয়।২০ দলের বরাদ্দ থেকে ৩-৪টি আসন দেয়া হয় ঐক্যফ্রন্টকে।
এর জন্য জামায়াতকে দুই-তিনটি আসন কম দেয়া হয়েছে।এতে ক্ষুব্ধ জামায়াত নেতারা হুমকি দেন, প্রতিশ্রুত আসন না দিলে তারা ‘ভিন্ন চিন্তা’ করতে বাধ্য হবেন।
২০ দলের শরিকদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক আসন পেয়েছে এলডিপি (৫)। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ৩, জাতীয় পার্টি (জাফর) ২, বিজেপি ১, এনপিপি ১, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১, খেলাফত মজলিস ২, পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশকে ১টি আসন দিয়েছে বিএনপি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি আসন ছাড় দেয়া হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক আসন পেয়েছে গণফোরাম ৬। জেএসডি ৫, নাগরিক ঐক্য ৫ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে ৩টি আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে এখনও গণফোরামের সঙ্গে কয়েকটি আসন নিয়ে দরকাষাকষি চলছে।
জামায়াতের ২২ আসন
জামায়াত নেতাদের মধ্যে চিঠি পেয়েছেন- দিনাজপুর-১ মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম ১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম ও কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ।
আরও পড়ুন: