
ঈদযাত্রায় ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতাসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)।
এসময় দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের ৩১৪টি আসনের ৮২টি টিকেট ও বিপুল পরিমান মোবাইল সিম উদ্ধার করা হয়েছে আসামিদের কাছ থেকে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ঢাকা শাহজাহানপুরের ঝিলপাড়ে অবস্থিত র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে এসব জানান উপ অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
গতকাল (২৬ মার্চ) ও ও আজ (২৭ মার্চ) রাতে রাজধানীর খিলগাঁও, বনশ্রী, ডেমরা ও কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশনে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. রিয়াজুল ইসলাম (২৯), মো. সেলিম (৫৩), সোহেল মিয়া (৩৬), তৌফিক (২৮), মাইনুল ইসলাম (২৪) ও রাকাতুল ইসলাম (১৯)।
মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দুষ্কৃতিকারী ও টিকেট কালোবাজারি চক্রের দৌরাত্মে স্বস্তিকর রেলভ্রমনের টিকেট প্রাপ্তি অনেক সাধারণ জনগণের জন্য অস্বস্তি, চিন্তা ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইনে টিকেট পাওয়া না গেলেও কালোবাজারে অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রি হতে দেখা যায়। টিকেট কালোবাজারিরা বিভিন্ন কৌশলে ট্রেনের টিকেট অগ্রিম সংগ্রহ করে অবৈধভাবে নিজেদের কাছে মজুদ করে রেখে সাধারণ যাত্রীদের নিকট ২ থেকে ৩ গুন বেশি দামে টিকেট বিক্রি করছে। সাধারণ যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী টিকেট না পাওয়া এবং টিকেট কালোবাজারী কর্তৃক অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হয়। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত ট্রেনের টিকেট কালোবাজির চক্রের সদস্যদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ ও কালোবাজারিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র্যাব-৩।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল (২৬মার্চ) রাতে রাজধানীর খিলগাঁও বনশ্রী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী চক্রের সদস্য মো. রিয়াজুল ইসলাম (২৯)কে গ্রেফতার করা হয়। পরে রিয়াজুল এর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ ভেররাতে র্যাব-১১ এর সহায়তায় অপর একটি অভিযানে কালোবাজারী চক্রের মূলহোতা মো. সেলিম (৫৩)কে রাজধানীর ডেমরা থানার ডগাইর বাজার এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে আজ সকালে র্যাব-৩ কর্তৃক পৃথক অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন হতে উপরোক্ত আসামিদের সহযোগী কালোবাজারী ট্রেনের টিকেট বিক্রয়কারী সদস্য সোহেল মিয়া (৩৬), তৌফিক (২৮), মাইনুল ইসলাম (২৪), ও রাকাতুল ইসলাম (১৯)কে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আসামিরা সবাই সংঘবদ্ধ টিকেট কালোবাজারী চক্রের সদস্য। ঈদযাত্রায় ট্রেনের টিকেটের বিপুল চাহিদা থাকে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ পরস্পর যোগসাজশে অনলাইনে অল্পমূল্যে টিকেট ক্রয় করে টিকেট প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের নিকট উচ্চমূল্যে গোপনে টিকেট বিক্রি করে। তারা মূলত ট্রেন ছাড়ার ৩ থেকে ৪ ঘন্টা আগে থেকে অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রির তৎপরতা শুরু করে। ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনাতে থাকে মজুদকৃত কালোবাজারি টিকেটের দাম তত বাড়তে থাকে। তারা সাধারণত ২ থেকে ৩ গুন মূল্যে টিকেট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে টিকেটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা তিস্তা এক্সপ্রেস, এগারো সিন্ধু প্রভাতি, মহানগর প্রভাতী, দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল, জামালপুর এক্সপ্রেস এবং পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে থাকে বলেও জানান তিনি।
আসামি মো. রিয়াজুল-এর কথা জানিয়ে উপ অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, রিয়াজুল এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে এবং কম্পিউটার ও গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। রিয়াজ ও মূলহোতা সেলিম একই এলাকায় বসবাসের সুবাদে তাদের পরিচয়ের মাধ্যমে সেলিমের প্ররোচনায় রিয়াজ অবৈধ ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সাথে জড়িয়ে পড়ে। আসামি মো. সেলিম অপর আসামি মো. রিয়াজুল ইসলামকে ঈদ উপলক্ষে অনলাইন হতে টিকেট কাটার জন্য অগ্রীম ৯৫ হাজার টাকা প্রদান করে। রিয়াজ ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজ হতে সিম বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন দেখে তাদের নিকট হতে প্রতিপিস সিম ১০০ টাকা ও প্রতিটি এনআইডি কার্ড ২০ টাকা করে অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় করে ঐ সকল সিম ও এনআইডি দিয়ে রেল সেবা অ্যাপস এ আইডি খুলে বিভিন্ন গন্তব্যের রেল টিকেট সংগ্রহ করে মূলহোতা সেলিমকে প্রদান করতো। আর আসামি সেলিম মাঠপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত অন্য সদস্যদের রেলষ্টেশন এলাকায় নিয়োগ করে যাদের টিকেট প্রয়োজন তাদের খুজে বের করে এবং তাদের নিকট উচ্চমূল্যে টিকিট বিক্রয় করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের নিকট হতে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের সর্বমোট ৩১৪টি সিটের ৮২টি ট্রেনের টিকেট, বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর ৯৫টি সীম, ১০টি মোবাইল ফোন, ১টি এনআইডি, ১টি ঘড়ি, ৪টি এটিএম কার্ড, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর, ১টি কি-বোর্ড, ১টি মাউস এবং নগদ ৭১০ টাকা উদ্ধার করা হয়।