পিবিএ ডেস্ক: দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। আজ সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে আরো দুই হাজার ৩৩৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, যা আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল দুই হাজার ১৭৬।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ১১ অগাস্ট সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৪১ হাজার ১৭৮ হয়েছে। এর মধ্যে অগাস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনেই ২২ হাজার ৭১৭ জন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ৮ অগাস্ট পর্যন্ত দুদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমলেও গত তিন দিন ধরে তা আবারও বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৮১ জন, যা আগের দিন এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৬৫ জন।
অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরের বাইরে সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৩৫৩ জন, যা আগের দিন এক হাজার ১১১ জন।
সরকারি হিসেবে, চলতি বছর এপ্রিলে ৫৮ জন, মে মাসে ১৯৩ জন, জুনে একহাজার ৮৮৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। জুলাই মাসে তা এক লাফে ১৬ হাজার ২৫৩ জনে পৌঁছায়। আর আগস্টের প্রথম ১০ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজার ৭১৭ জন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার হার গত তিন দিনের তুলনায় বেড়েছে। নতুন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ঢাকা মহানগরে কমছে। অর্থাৎ রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গুতে নতুন আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ঢাকার বাইরে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়লেও সেটা আশঙ্কাজনক নয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র।
সূত্র জানায়, লোকজন ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে যাওয়ায় ঢাকায় রোগী ভর্তির সংখ্যা কমছে। আর সারা দেশে তুলনামূলকভাবে বেড়েছে, তবে তা আশঙ্কাজনক বলা যাবে না। ঢাকার বাইরে যেহেতু ডেঙ্গু মশা কম সে কারণে আক্রান্তদের কাছ থেকে ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা কম। এ কারণে আমরা আশা করছি, সেপ্টেম্বর নাগাদ রোগীর সংখ্যা অনেক কমে যাবে।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সবগুলো হাসপাতালের চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়া আছে। আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হবে না।
ডেঙ্গুর বাহক মশা এইডিস এজিপ্টি প্রধানত শহরে পাওয়া গেলেও মানুষের ভ্রমণসঙ্গী হয়ে যানবাহনে করে তা পৌঁছে যাচ্ছে সারা দেশে। ফলে কোরবানির ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি বিপদজনক মাত্রায় পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের পক্ষ থেকে ঈদযাত্রার যানবাহন ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার আগে মশা মরার ওষুধ স্প্রে করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যদিও তা মানা হচ্ছে কিনা তার নজরদারি নেই। কারও মধ্যে জ্বরসহ ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা গেলে ঢাকার বাইরে যাওয়ার আগে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে আহ্বান জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।
সরকার চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করলেও সংবাদমাধ্যমে আসা সংখ্যা এর কয়েক গুণ বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রবিবার সকালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট আট হাজার ৭৫৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের চার হাজার ৬৭১ জন এবং বাইরে চার হাজার ৮৩ জন চিকিৎসাধীন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে গেছেন। এসব জেলায় ভর্তি হয়েছেন মোট ৩৫৭ জন নতুন রোগী। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ২৩৭ জন, খুলনা বিভাগে ২০৯ জন, বরিশাল বিভাগে ১৮৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৪৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০৫ জন, রংপুর বিভাগে ৭৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ৩৯ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে গেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
পিবিএ/এমএসএম