৪ শতাংশ মৃত্যু হয় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে

sitdown-work-PBA

পিবিএ ডেস্ক: প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে আজকাল বেশিরভাগ কাজ করা যায় কম্পিউটারের মাধ্যমে। যার ফলে, কায়িক পরিশ্রম কমে গিয়েছে, বেড়েছে মাথা খাটানোর কাজ। আজকাল বেশিরভাগ অফিসেই টানা বসে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ করতে হয়। দেখা গেছে, দিনের মধ্যে দীর্ঘ ৮-১১ ঘণ্টা আমাদের চেয়ারে বসে কাজ করতে হয়। এর জন্য রয়েছে মারাত্বক শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি।

সারা বিশ্বে প্রতি বছর যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ৪ শতাংশ মৃত্যু হয় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে। সংখ্যাটা ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার। ৩ ঘণ্টার বেশি টানা বসে থাকলে মৃত্যুকে সাদরে ডেকে আনছেন আপনার জীবনে।

একটানা বসে থাকলে শরীরের নয়টি অঙ্গ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়- মাথা, হাত, পা, পায়ের পাতা, ঘাড়, পিঠ, ফুসফুস, পাকস্থলী এবং হার্ট। স্পেনের সান জর্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, খুব কম বিরতিতে একভাবে বসে কাজ করলে বা টিভি দেখলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায় ৯০ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে সারাদিন বসে একটানা কাজ করলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। যেমন-

১. দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে হৃদরোগজনিত জটিলতা দেখা দেয়। বেশিক্ষণ বসে থাকলে শরীরে যে চর্বি জমা হয় সেগুলো ঝরে যাওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। তখন শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে জটিলতা তৈরি করে।

২. যারা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন তাদের বেশিরভাগেরই ঘাড়, কাঁধ, কোমর এবং পিঠে ব্যথায় ভুগতে দেখা যায়।

৩. সারাদিন কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপে বসে কাজ করলে দেহভঙ্গিতে তার প্রভাব পড়ে।

৪. বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটানা বসে কাজ করলে শুধু শারীরিক ক্ষতিই হয় না, মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।

৫. একটানা কাজ করলে শরীরে ওজন বাড়ার প্রবণতা বাড়ে।

৬. নরওয়ের ‘ইউনিভার্সিটি অব সায়ন্স এন্ড টেকনলজি’র গবেষকরা বলছেন, একটানা বসে কাজ করলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

৭. দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করলে পায়ের উপরও চাপ পড়ে।এতে পায়ের শিরাতে রক্ত চলাচলে সমস্যা হয়। মাঝেমধ্যে পা ফুলেও যায়।

৮. একটানা বসে কাজ করলে ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে সারাদিন বসে যাদের কাজ করতে তাদের অন্তত প্রতি আধ ঘণ্টা পর একবার বিরতি নেয়া উচিত। সেক্ষেত্রে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি কিংবা দাঁড়াতে পারেন। যাদের ঘাড়, পিঠে ব্যথা হয় তাদের প্রতি আধ ঘণ্টা পর পর তাদের ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করা উচিত।

সমস্যা এড়াতে নিতে পারেন কিছু সতর্কতা:

১. অফিসে কাজ করার সময় কম্পিউটারের মনিটর রাখুন আপনার চোখ বরাবর। কাজ করার সময় মনিটর যদি খুব বেশি উঁচু বা নিচু থাকে তাহলে তা ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা এবং হাড়ের জোড়ে সমস্যা হতে পারে।

২. কাজ করার সময় কাঁধ যেন আরামে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। কাজ করার সময় কাঁধ বাঁকা না করে এবং বাহু ৯০ ডিগ্রি ভাবে সোজা রাখতে হবে। এতে কাঁধ ও ঘাড়ের ব্যথা এড়ানো সম্ভব।

৩. পিঠের মাঝামাঝি অংশে বালিশ বা অন্য কিছু দিয়ে ঠেস দিন। এতে পিঠ নিরাপদে থাকবে এবং পিঠ বাঁকাবে কম। ফলে পিঠ বা মেরুদণ্ডে ব্যথা হবে না।

৪. প্রতি আধ ঘণ্টা পর পর গলা ঘুরিয়ে এবং সম্ভব হলে নিজ সিট থেকে উঠে হাঁটাচলা করুন। এছাড়াও হাত মাথার উপরে এবং পাশে ঘুরিয়েও ব্যায়াম করা যায়।

কী খাবেন, কী খাবেন না:

১. ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, যেমন- ডিম, দুধ, দই, ছানা, মাংস, ছোট মাছ, খেজুর, নাসপাতির সঙ্গে পর্যাপ্ত ভাত, রুটি, ডাল, শাকসবজি খান।

২. মধ্যবয়সী মহিলারা দিনে একটা করে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবেন।

৩. চা–কফি–সফট ড্রিংকস কম খান, পানি খান শরীর বুঝে।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...