৫ দফা দাবিতে আবারো আন্দোলনে নামছে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা

পিবিএ,ঢাকা: সেশনজট নিরসন, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, ত্রুটিমুক্ত ফলাফল প্রকাশসহ পাঁচ দফা দাবিতে আবারো আন্দোলনে নামছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের ৫ দফা বাস্তবায়নে বার বার আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন না করায় তারা আগামীকাল ৬ জুলাই শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করবে বলে বার্তা সংস্থা পিবিএ’কে জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা একেএম আবুবকর।

তিনি বলেন, বিক্ষোভ থেকে পরবর্তি কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

উল্লেখ্য, দাবী আদায়ের লক্ষ্যে এর আগে গত ২৪ ও ২৫ এপ্রিল আন্দোলন করে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা।

২৪ তারিখ ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ও ২৫ তারিখ নীলক্ষেতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। ২৫ তারিখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে সমাধানের আশ্বাস নিয়ে আসেন ঢাবি প্রক্টর। তার পরামর্শে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সাথে দেখা করে ও তার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি তুলে নয়। কিন্তু এরপর ৭০ দিন পার হয়ে গেলেও দাবী মানার কোন লক্ষণ দেখা না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবার মাঠে নামছে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা একেএম আবুবকর

৫ দফা দাবি পুরনের আশ্বাসের ৭০দিন পরের অবস্থা:

দফা-১: ৯০দিনে ফল প্রকাশের দাবি করা হলেও অনার্স ২০১৪-১৫ ও ডিগ্রি ২০১৪-১৫ পরীক্ষার ৮মাস পর আংশিক ফল প্রকাশ এবং অনার্স ২০১৭-১৮ও ডিগ্রি ২০১৩-১৪ এর পরীক্ষার সাত মাস পার হলেও ফল প্রকাশ হয়নি।

দফা-২: গনহারে অকৃতকার্যদের খাতা পুন:মূল্যায়ন হয়নি।

দফা-৩: স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন নির্মানের লক্ষ্যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

দফা-৪: চলমান পরীক্ষা গুলোতে পূর্ব নোটিশ ব্যতিত নতুন প্যাটার্নে প্রশ্নপত্র প্রনয়ন করা হয়েছে।

দফা-৫: প্রতিটি সেশনের সকল বর্ষের একাডেমীক ক্যালেন্ডার প্রকাশের দাবি করা হলেও শুধুমাত্র চলতি বর্ষের অসম্পূর্ণ একাডেমীক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সেখানে উল্লেখিত সময়ে পরীক্ষা বা অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না।
এবং এখন পর্যন্ত ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করা হয়নি।

উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অধিভুক্ত সরকারি সাতটি কলেজ হল- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। কিন্তু উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধির যে লক্ষ্য নিয়ে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল সেটি বর্তমানে ব্যাহত হচ্ছে। সেশনজট, সময়মতো পরীক্ষা, রুটিন প্রকাশ, ফলাফল না হওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কলেজগুলোর কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর জীবন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাত কলেজের দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ ঢাবি প্রশাসন। যদিও বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের উদ্ভূত সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান ও সাত দিনের মধ্যে একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরির ঘোষণাও দিয়েছিলেনন তিনি।

ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে পাঠদান চলছে। অন্যদিকে, পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র করা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়মে। এতে করে ভালো প্রস্তুতি থাকলেও পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছে না সাত কলেজের কয়েক লাখ শিক্ষার্থী।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষা গ্রহণ আর ফলাফল দেয়া ছাড়া ঢাবি দায়িত্বই পালন করছে না। প্রতিবারই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। ফলে পাঠদান আর পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে একটা হযবরল ব্যাপার দেখা যাচ্ছে।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...