পিবিএ ডেস্কঃ ডায়াবেটিস আছে এমন ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী জানেনই না যে, তাদের ডায়াবেটিস আছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) উদ্যোগে রাজধানীসহ সারা দেশে এক লাখেরও বেশি মানুষের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সব সদসভুক্ত দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘আসুন, পরিবারকে ডায়াবেটিসমুক্ত রাখি।’ বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করাই এ দিবসটির প্রধান লক্ষ্য।
বাডাস সভাপতি অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খান বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। দেশব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে রোগটি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারলে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।
অধ্যাপক একে আজাদ খান জানান, ২০১৮ সালের নভেম্বরজুড়ে দেশের প্রতিটি উপজেলাসহ মোট ৮০০ স্পটে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে ওই গবেষণা চালানো হয়। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে কর্মসূচি নেওয়া হয়। বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা কর্মসূচিতে তাদেরই পরীক্ষা করা হয়, যারা জানেন না তাদের ডায়াবেটিস আছে।
এক লাখেরও বেশি মানুষের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে গিয়ে বাডাস দেখে যে, তাদের ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ সংখ্যা এতদিনের অনুমিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে গত বুধবার রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল মিলনায়তনে বাডাসের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বাডাস সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪২ কোটিরও বেশি (সূত্র : আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস, ২০১৭, অষ্টম সংস্করণ)। টাইপ-২ ডায়াবেটিস যেহেতু বহুলাংশেই (৭০ শতাংশ পর্যন্ত) প্রতিরোধযোগ্য, ফলে এখনই যদি এ রোগের প্রতিরোধ না করা যায়, তাহলে এ সংখ্যা ২০৪০ সাল নাগাদ প্রায় ৬৪ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে দেশে প্রায় ৭৩ লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয় (সূত্র : আইডিএফ এটলাস, ২০১৭), যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী। তাছাড়া এ কথাও উল্লেখ করতে হয় যে, ডায়াবেটিস আছে, এমন অর্ধেকেরও বেশি লোক জানেই না যে, তাদের ডায়াবেটিস আছে। এছাড়া বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২০ জন গর্ভবতী নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন।
বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারী ও গর্ভের শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তবে তাদের পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি। এ অবস্থায় পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
পিবিএ/এমআর