‘৫ আগস্ট ছাত্র-জনতাকে যেভাবে রক্ষা করেছিল র‍্যাব’

ত ৫ আগস্ট প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পতনের দিন ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলের সময়ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ চলেছে। তবে ওই মুহূর্তে আক্রমণ না অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে রক্ষা করেছিল র‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) হেডকোয়ার্টার। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি শাফিন রহমান নামের ফেসবুক আইডি থেকে এই ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।

পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, ‘গুঞ্জন ওঠে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার উদ্দেশে এয়ারপোর্ট থেকে বিমানে উঠবেন। খবরটি বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা কুর্মিটোলা রোড, এয়ারপোর্ট, খিলগাঁও থেকে একদম উত্তরা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করে। এ সময় এয়ারপোর্ট এরিয়ায় জনতার ওপর মুহুর্মুহু গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ, এপিবিএন। ছত্রভঙ্গ হয়ে ছাত্র-জনতা দিগ্বিদিক ছুটতে শুরু করে। এয়ারপোর্টের ৯ নম্বর গেটে অবস্থিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর স্থায়ী ব্যারাক থেকে এপিবিএন সদস্যরা বের হয়ে ধাওয়া দিলে ছাত্র-জনতা ৮ নম্বর গেটে র‌্যাব হেডকোয়ার্টারের দিকে সরে যেতে বাধ্য হয়।

‘মাঝখানে পড়ে যাওয়া জনতার একদিকে র‌্যাব, আরেকদিকে এপিবিএন, অন্যদিকে রাস্তায় পুলিশ। এমতাবস্থায় তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় একজন র‌্যাব কর্মকর্তাকে পাঠানো হয় ছাত্র-জনতাকে অভয় দিয়ে তাদেরকে কনভিন্স করে র‌্যাব হেডকোয়ার্টারের দিকে নিয়ে আসার জন্য।’

‘নির্দেশ মোতাবেক ওই কর্মকর্তা অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে পুলিশের লাইভ এমিউনিশনের হাত থেকে বাঁচিয়ে হেডকোয়ার্টারের দিকে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। এরপর ভীত, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত জনতার জন্য শুকনো খাবার হিসেবে এক প্যাকেট বিস্কিট, একটি মিষ্টি এবং একটি মিনারেল ওয়াটারের বোতল দেওয়া হয়। ভিডিওতে আপনারা দেখতে পাবেন, আইল্যান্ডের ওপর বসে সবাই খাবার খাচ্ছেন। অতঃপর তাদের সবাইকেই সেফ এক্সিট দেওয়া হয়।’

‘সেদিন র‌্যাবের উক্ত কর্মকর্তারা ব্যাকফায়ার করলে বা নিউট্রাল পজিশন নিলেও মিনিমাম ৪০-৫০ জন স্পট ডেড হয়ে যেত। কিন্তু র‌্যাবের ওই ইউনিট সরাসরি ছাত্র-জনতাকে সাহায্য করেন। এখন প্রশ্ন হলো, র‌্যাবকে আমরা হেলিকপ্টারে করে ফায়ার করতে দেখেছি। তাহলে তাদেরই অফিসাররা কেনো এয়ারপোর্টে ছাত্র-জনতাকে সেফ এক্সিট দিল?’

ফেসবুক পোস্টটিতে সাফিন আরও লিখেছেন, মূলত আন্দোলনের শুরু থেকেই র‌্যাব হেডকোয়ার্টার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গ্রুপ সরাসরি ছাত্র-জনতার পক্ষে অবস্থান না নিলেও ছাত্রদের ওপর গুলি চালাতে অপারগতা জানায়; অন্য একটি গ্রুপ সরাসরি রুলিং গভর্মেন্টের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে বিভিন্ন জায়গায় ছাত্র-জনতার ওপর ম্যাসাকার চালায়। ছাত্রদের আন্দোলন যখন একরকম নিশ্চিত বার্তা দেয় যে আওয়ামী লীগ আর থাকছে না, তখন র‌্যাবের ওই ইউনিট সরাসরি ছাত্র-জনতার পক্ষ অবলম্বন করে এবং যে গ্রুপটি ছাত্র হত্যায় মেতে উঠেছিল, তাদের এগেইনস্টে ছাত্রদের টেকনিক্যালি হেল্প করে। ভিডিওতে র‌্যাবের এমন একজন অফিসার (এডিসি) আছেন, যিনি র‌্যাবের আওয়ামীপন্থি অফিসারদের ব্যাপারে ছাত্রদের সফিস্টিকেটেড ইনফরমেশন দিয়ে সাহায্য করেছেন। প্রটেস্টরদের জন্য ম্যাপ তৈরি, লাইভ এমিউনিশনের এগেইনস্টে টেক্টিক্যাল মুভ কেমন হওয়া উচিত- এসব তথ্য উপাত্ত দিয়েও সাহায্য করেছেন।

পোস্টে শাফিন রহমান আরও লিখেছেন, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন ‘যে ব্যক্তি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করল সে যেন পুরো পৃথিবীকে হত্যা করল, আর যে ব্যক্তি একজন নিরপরাধ মানুষকে বাঁচিয়ে দিল সে যেন পুরো পৃথিবীকে হত্যার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল’ (সুরা মায়েদাহ, আয়াত : ৩২) একটা বাহিনীর সবাই ভালো বা সবাই মন্দ হয় না। ভালো মন্দ মিলিয়েই হয়। কিন্তু আমাদের এই আন্দোলনে যে অফিসার একজন নিরপরাধ মানুষের সাহায্যার্থে ছোট্ট একটি তথ্য দিয়েও সহায়তা করেছে, আমরা তাদেরকে আন্দোলনের স্টেকহোল্ডার মনে করি। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

সবশেষ বিশেষ দ্রষ্টব্যে শাফিন লিখেছেন, ভিডিওটি কনফিডেন্সিয়াল হওয়ার দরুন সব অফিসারের ফেস ব্ল্যার করে দেওয়া হয়েছে এবং বিগত সাত মাসে এই ভিডিওটি কোথাও প্রকাশিত হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষই প্রথম প্রকাশ করা হলো।

এদিকে ওই ভিডিওটির কমেন্ট বক্সে ৫ আগস্টের ওই ঘটনার জন্য প্রশংসা পাচ্ছেন বাহিনীটি। পোস্টটির এ. রাজ্জাক নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘অনেকে র‍্যাব নিষিদ্ধের কথা বলে। কিন্তু র‍্যাব গঠনের উদ্দেশ্য ছিল অত্যন্ত মহৎ। শেখ হাসিনা র‍্যাবকে মিস ইউস করেছে। অনেক জটিল মামলা স্থানীয় থানার পুলিশ প্রভাব মুক্ত হয়ে তদন্ত করতে পারে না। সেই সকল চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে র‍্যাব এর প্রয়োজনীয়তা আছে।’

মো. হৃদয় রহমান নামের আরেকজন কমেন্ট বক্সে লিখেছেন, ‘এনাদের বিবেক ছিল দেখেই আজও টিকে আছে বাংলাদেশ, না হলে ৫ই আগস্টের পরে গৃহযুদ্ধ লেগে যেতো।’

রাতুল এইচ শিমুল নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘যাত্রাবাড়ীর দিকেও এক র‍্যাব ইউনিট জনতার সঙ্গে মিশে যায়। ৫ তারিখ যখন পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করছিলো মানুষদের।’

আরও পড়ুন...