‌`আমি মেয়র, আমারও ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার আছে’

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : মারধর ও বাড়িতে হামলার অভিযোগে জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকনের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করলেন মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সরিষাবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগী ওই কর্মকর্তা।

অভিযোগে প্রকাশ, সরিষাবাড়ী উপজেলায় কর্মরত পরিবার পরিকল্পনা অফিসার গোলাম রব্বানী পৌরসভার আরামনগর বাজারস্থ কাঠপট্টির নিজবাসায় বসবাস করছেন। মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকন বুধবার (২২ এপ্রিল) সকালে দলবল নিয়ে ওই বাসায় যান। গোলাম রব্বানীর ছোটভাই গোলাম মোস্তফাকে ঘরের বাইরে ডেকে এনে মারধর শুরু করেন মেয়র। অফিসে যাবার জন্য তখন ওই কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী তৈরি হচ্ছিলেন। সে সময় এক মহিলা এসে খবর দেয় যে ওই কর্মকর্তাকে মেয়র ডাকছেন। গোলাম রব্বানী সালাম দিয়ে কথা বলতে চাইলে মেয়র তাকেও মারতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তাকে পৌরসভা ভবন পর্যন্ত টেনহিচড়ে নিয়ে যেতে চান। ওই কর্মকর্তা অফিসে জরুরি কাজ আছে বললে মেয়র বলেন, থু তোর অফিস। তারপর ওই কর্মকর্তাকে মেয়র বলেন, ‘আমি এখন তোদের দুভাইকে এরেস্ট করলাম, আমার ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার আছে।’

গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের জানান, পূর্বে কোনো ঘটনা ছাড়াই এমন আচরণে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি। মেয়রকে আমি মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার পরিচয় দিলেও তিনি অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করেন। এ সময় আমি মোবাইল বের করে ঘটনাটি জানাতে আমার বাল্যবন্ধু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশাকে কল করতে চাইলে মেয়র হাত থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেন এবং আওয়ামী লীগের সভাপতির নাম উচ্চারণ করে তাকেও গালিগালাজ করতে থাকেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মেয়রের হামলায় ওই বাসার গেট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মারধরে ওই কর্মকর্তার পরিবারের আরো পাঁচজন সদস্য আহত হন। ঘটনার পরই মেয়র ভাড়াটিয়া লোকদের দিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ তুলে বক্তব্য দেন বলেও তারা জানান। জীবনের নিরাপত্তহীনতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ওই পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী।

অস্ত্রের মহড়া, নারী কেলেঙ্কারী, গুম নাটক, সাংবাদিক ও কাউন্সিলরদের হত্যার হুমকি এবং অর্থ আত্মসাৎসহ নানা নাটকীয় ঘটনার জন্ম দিয়ে সবসময় সমালোচনার শীর্ষে থাকতে পছন্দ করেন মেয়র রুকুনুজ্জামান। তার বিরুদ্ধে রয়েছে থানায় ডজনখানেক জিডি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব উদ্দিন আহমদ পিবিএ’কে বলেন, মেয়র ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের মধ্যে ঘটনাটি শুনেছি। দু’জনই সম্মানী লোক, এটা দুঃখজনক ঘটনা।

থানার অফিসার ইনচার্জ মাজেদুর রহমান পিবিএ’কে জানান, পরিবার পরিকল্পনা অফিসার পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন। যথাযথ তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হব।

জানা গেছে, নির্বাচিত হবার চার বছরে মেয়র রোকন নানা কারণে বিতর্কের শীর্ষে। এলাকায় তিনি ‘রাজাকারের নাতি’ হিসেবে চিহ্নিত থাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ এবং দুর্নীতির দায়ে দুদক ও স্থানীয় সরকার বিভাগে একাধিক অভিযোগের তদন্ত চলমান আছে।

এ ব্যাপারে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকন মুঠোফানে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে গোলাম রব্বানী একটা জিডি করেছে, কিন্তু আমি তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছি। সে আমার সাথে বেশি বাড়াবাড়ি করেছে, আওয়ামী লীগের বড়বড় নেতার রেফারেন্স দিয়েছে। আমি মেয়র, আমারও ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার আছে।’
পৌরসভার বিধিবিধান মেনে আগামী সাতদিনের মধ্যে তার বাড়ি ভেঙে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

পিবিএ/রাজন্য রুহানি/এমএ

আরও পড়ুন...