ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনে বক্ষোভ

পিবিএ ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের কথিত শতাব্দীর সেরা শান্তি পরিকল্পনাকে শয়তানি পরিকল্পনা বলে আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছে ফিলিস্তিনিরা। নিজেদের মধ্যকার সকল বিভেদ ভুলে হামাস ও ফাতাহ গ্রুপ এখন মিলিতভাবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে।

ফিলিস্তিনিদের বোকা বানানোর পরিকল্পনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার গাজা ও পশ্চিমতীরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবিতে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরা এ সময়- ট্রাম্প নিপাত যাক, বাহরাইন নিপাত যাক এবং মানামা সম্মেলন নিপাত যাক বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

১২ বছরের দ্বন্দ্ব ভুলে মঙ্গলবার পশ্চিমতীরে মাহমুদ আব্বাসের দল ফাতাহ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী হামাস নেতাকর্মীরা ওই বিক্ষোভে যোগ দেন।

মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনায় ইসরাইলের সম্মতি থাকলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ফিলিস্তিনিরা।ইসরায়েলের গোয়েন্দা ওয়েবসাইট দেবকাফাইল জানিয়েছে, ট্রাম্প যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তাতে পশ্চিম তীরের অর্ধেক ভূমি এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হবে সীমিত পর্যায়ের। এছাড়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ফিরে আসা বা অধিকৃত ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিগুলোকে আর কখনই গুরুত্ব দেওয়া হবে না।

এ পরিকল্পনায় বাস্তবায়নে ফিলিস্তিনিকে ৫ হাজার কোটি ডলারের (৫০ বিলিয়ন) টোপ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বাহরাইনে এ পরিকল্পনা প্রকাশের আগে একটি ফান্ড তৈরির ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। বলা হচ্ছে, এ ফান্ডের অর্থে ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যে ১০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।

এ পরিকল্পনা প্রণয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার। ফিলিস্তিনিদের জন্য একে ‘শতাব্দীর সেরা সুযোগ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

তবে নতুন এ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিন। তারা বলেছে, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কেবল রাজনৈতিক উপায়েই সংকট সমাধান সম্ভব।

বাহরাইনে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের জন্য বিতর্কিত শান্তি পরিকল্পনা পেশ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এতে নেতৃত্ব দেবেন ট্রাম্পের জামাতা কুশনার।

একতরফাভাবে প্রণয়ন করা ওই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিন ছাড়াও শনিবার জর্ডানে বিক্ষোভে নামেন দেশটিতে বসবাসরত ফিলিস্তিনের নাগরিকরা। জর্ডানের সাধারণ মানুষও এতে যোগ দেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এমন পরিস্থিতিতে শান্তি পরিকল্পনার পক্ষে জনমত আদায়ে ফিলিস্তিনকে নতুন অর্থনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন কুশনার।

এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে ট্রাম্প শয়তানি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এবং তা কখনই বাস্তবায়িত হবে না। সোমবার ইরানের হজ বিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেছেন, মার্কিনীরা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বিষয়ে যে শয়তানি পরিকল্পনা নিয়েছে সেটাকে ‘ডিল অব সেঞ্চুরি’ নামে অভিহিত করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের জেনে রাখা উচিত এই শয়তানি পরিকল্পনা কখনই বাস্তবায়িত হবে না। মার্কিন ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও ফিলিস্তিন ইস্যু মানুষের মন থেকে মুছে যাবে না এবং বায়তুল মুকাদ্দাসই ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে থাকবে।

আয়াতুল্লাহ খোমেনি বলেন, ফিলিস্তিনি জাতি মার্কিন ষড়যন্ত্র রুখে দেবে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি মুসলমানদের সমর্থন থাকবে। কোনো কোনো মুসলিম নামধারী সরকার যারা বাস্তবে ইসলাম ধর্ম মানে না তারা নিজেদের মূর্খতা, অজ্ঞতা ও লোভের কারণে আমেরিকার জন্য বলিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় মুসলিম উম্মাহ ও ফিলিস্তিনি জাতিই বিজয় লাভ করবে। একদিন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে অবৈধ সরকারের শেকড় উপড়ে যাবে।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...