পিবিএ,ডেস্ক: প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলা ভাষার সাহিত্য চর্চা পরিবর্তিত হয়ে আসছে। বাংলা সাহিত্য প্রাচীনকাল থেকে বিবর্তনের এই ধারা প্রভাবিত হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের কিছু শক্তিমান সাহিত্যিকদের মাধ্যমে।প্রাচীন যুগচর্যাপদবাংলা লিখিত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।
ধারণা করা হয় এটি খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে রচিত হয়েছিল। চর্যার প্রধান কবিগণ হলেন, লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ।
১৯০৭খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায়হর প্রসাদ শাস্ত্রী,নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। মধ্য যুগ ১২০২ সালে গৌড়ে তুর্কি আক্রমণের সময় থেকে ঊনবিংশ শতাব্দির মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কালকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ বলা হয়। তবে ১২০১ থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত সময়কে বাংলা সাহিত্যের অন্ধকারযুগ বলা হয়। এ যুগে মসলমান ও তুর্কি আক্রমনের কারনে কবি সাহিত্যিক গন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতেন। যার কারনে উল্লেখযোগ্য কোন সাহিত্য রচনা করতে পারেন নি তাঁরা। এই সময়ের সাহিত্য মূলত ধর্মীয় বিষয় নির্ভর ছিল। প্রথমদিকের সমস্ত রচনাই ছিল পদ্যমূলক – গদ্যমূলক রচনা চালু হয় অনেকপরে। তুলোট কাগজে লেখা পুথির মাধ্যমে সাহিত্যচর্চা চলত।
বৈষ্ণব সাহিত্যমূল নিবন্ধ:
বৈঞ্চব মতকে কেন্দ্র করে রচিত বৈষ্ণব সাহিত্য। পঞ্চাদশ শতকেশ্রী চৈতন্য দেবের ভাব বিপ্লবকে কেন্দ্র করে গোটা বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব সাহিত্যের জন্ম হয়। বৈঞ্চব ধর্মের প্রর্বতকশ্রী চৈতন্য দেবকোন পুস্তক লিখে যাননি অথচ তাঁকে ঘিরেই জন্ম হয় এই সাহিত্যের।বৈষ্ণব পদাবলীসাহিত্যর সূচনা ঘটে চর্তুদশ শতকে বিদ্যাপতি চন্ডীদাশ-এর সময়ে তবে ষোড়শ শতকে এই সাহিত্যের বিকাশ হয়। বৈষ্ণব পদাবলীর প্রধান অবলম্বন রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তনমূল নিবন্ধ:
শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন কবিতাগুলোর একটি হস্তলিখিত পান্ডুলিপি উদ্ধার করা হয় ১৯০৯ সালে। বিষ্ণুপুর শহরের নিকটবর্তী কাকিল্যা গ্রামের জনৈক দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ এটি আবিষ্কার করেন। বড়ুচণ্ডীদাস নামের মধ্যযুগের এক কবি এটি রচনা করেন। চর্যাপদে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেয়, আবার শ্রীকৃষ্ণকীর্তনেবাংলা ভাষাএকটি নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় শ্রীকৃষ্ণকীর্তন সম্পর্কে বলেছেন যে,”শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে যে বাংলা ব্যকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই বর্তমানের নতুন বাংলা সম্পর্কে ধারণ দেয়। “বিদ্যাপতি পদাবলী মৈথিলী ভাষায় লেখা বিদ্যাপতি পদাবলী বাংলা কবিতায় বিশেষ প্রভাব রেখেছিল। বিদ্যাপতি পঞ্চদশ শতকের মৈথিল কবি। বঙ্গদেশে তাঁর প্রচলিত পদাবলীর ভাষা ব্রজবুলি। অনেক বাঙালী কবি এই ভাষায় কবিতা রচণা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভানুসিংহের পদাবলীতে’ এই ভাষার ব্যবহার দেখা যায় |চন্ডিদাসের পদাবলীরাধা এবং কৃষ্ণের প্রেমের কাহিনীগুলো চণ্ডীদাসের লেখা পদাবলীতে বর্ণনা করা হয়েছে। “বাদু”,”দেভিজা”, “দিনা” ইত্যাদি বিভিন্ন নামে এবং কখনো কখনো নাম ছাড়া এই পদাবলীগুলো পাওয়া গেছে।
পিবিএ/এফএস