এবারের বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম পরাজয়

পিবিএ ডেস্ক: ভারতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ঘুরে দাঁড়াল ইয়ান মরগান বাহিনী। অদম্য ভারতকে ৩১ রানে হারিয়ে দুরন্ত জয়ে মাটিতে নামিয়ে আনল ইংল্যান্ড। বিরাট কোহলিকে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ দিয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন ভালোভাবেই টিকিয়ে রাখলো স্বাগতিক ইংল্যান্ড।

বিশ্বকাপে কোন দলই এখন আর অপরাজিত নেই। ইংল্যান্ডের কাছে ভারত হেরে যাওয়ায় সব দলকেই পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হল।

গতকাল আগে ব্যাট করে জনি বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে করে ৩৩৭ রান। ফলে জয়ের জন্য ভারতের সামনে টার্গেট ছিল বিশাল ৩৩৮ রান। এই ম্যাচে জিততে হলে ভারতকে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান টপকে জয়ের রেকর্ড গড়তে হত। কিন্তু ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরির পরও ৫ উইকেটে ভারত করতে পারে ৩০৬ রান। ফলে ইংল্যান্ড জয় পায় ৩১ রানে। এই জয়ের ফলে ৮ ম্যাচে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে ইংল্যান্ড উঠে এল চার নাম্বারে। ম্যাচে হারলেও ১১ পয়েন্ট নিয়ে ভারতের অবস্থান ২ নাম্বারে। বিজয়ী দলের পক্ষে সেঞ্চুরিয়ান বেয়ারস্টো ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।

জয়ের জন্য ভারতের সামনে ৩৩৮ রানের টার্গেটটা কঠিনই ছিল। এই কঠিন টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ভারত প্রথমেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে। দলীয় ৮ রানে ওপেনার লোকেশ রাহুলকে বিদায় করে দলকে প্রথমেই উইকেট এনে দেন ওকস। নিজের বলে ওকস নিজেই ক্যাচ ধরে রানের খাতা খোলার আগেই রাহুণকে বিদায় করেন। দলীয় ৮ রানে প্রথম উইকেট হারালেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলি জুটি করে দলকে ভালোই এগিয়ে নেয়। এই জুটি ভাংগার আগেই ভারত পৌছে যায় ১৪৫ রানে। এই জুটির সংগ্রহ ১৩৭ রান। বিরাট কোহলির বিদায়ে ভাংগে এই সফল জুটি। লিয়াম প্লানকেট এর বলে আউট হওয়ার আগে কোহলি করেন ৬৬ রান। ৭৬ বলে ৭ চারে সাজানো ছিল তার ইনিংসটি। এই ম্যাচে ফিফটি তুলে নিয়ে বিশ্বকাপে রেকর্ড করেছেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। টানা পাঁচ ম্যাচে অর্ধশতক করে বিশ্বকাপে স্টিভেন স্মিথের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন তিনি। ব্যাট করতে নেমে রিশভ পান্ত রোহিত শর্মাকে ভালোই সার্পোট দেন। ফলে দলকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি রোহিত শর্মা সেঞ্চুরিও তুলে নেন। তবে সেঞ্চুরি করে বেশি সময় টিকতে পারেননি শর্মা। দলীয় ১৯৮ রানে ওকসের বলে আউট হন রোহিত। আউট হওয়ার আগে রোহিত সেঞ্চুরিসহ করেন ১০২ রান। ১০৯ বলে ১৫ চারে সাজানো ছিল রোহিতের ইনিংসটি। এবারে বিশ্বকাপে এটি রোহিতের তৃতীয় সেঞ্চুরি। ফলে চলতি আসরে সেঞ্চুরি সংখ্যায় রোহিত ছাড়িয়ে গেলেন সাকিব, উলিয়ামসন, রুট, ফিঞ্চ ও ওয়ার্নারকে। দলীয় ২২৬ রানে ভারত হারায় পান্ত এর উইকেট। প্লানকেটের বলে উডকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে পান্থ ২৯ বলে করেন ৩২ রান। হার্ডিক পান্ডিয়া- ধোনি জুটি করে দলকে এগিয়ে (১১-এর পৃষ্ঠার ৭ কলাম)

নেয়ার চেস্টা করলেও রান রেটটা বাড়াতে পারেনি। দলীয় ১৬৭ রানে প্লানকেটই ফিরান পান্ডিয়াকে। আউট হওয়ার আগে পান্ডিয়া ৩৩ বলে করেন ৪৫ রান। ধোনি আর যাদব মিলে চেস্টা করেও দলকে জয়ের পথে নিতে পারেনি। কারন জয়ের জন্য রান রেটটা ছিল অনেক বেশি। শেষ পর্যন্ত ভারত ৫ উইকেটে করে ৩০৫ রান। ধোনি ৪২ রানে আর যাদব ১২ রানে অপরাজিত ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে প্লানকেট তিনটি আর ওকস নেন দুটি উইকেট। এর আগে, টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে করে ৩৩৭ রান।

ভারতের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করে ইংল্যান্ড। দুই ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো ১৬০ রানের জুটি গড়ে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। জেসন রয় ফিফটি করে আউট হলেও সেঞ্চুরি করেই মাঠ ছেড়েছেন বেয়ারস্টো। দলীয় ১৬০ রানে জেসন রয়ের বিধায়ে ইংল্যান্ড হারায় প্রথম উইকেট। কুলদীপ যাদবের বলে আউট হওয়ার আগে জেসন রয় করেন ৬৬ রান। ৫৭ বলে ৭ চার আর ২ ছক্কায় সাজানো ছিল তার ইনিংসটি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটা তার ১৬তম হাফসেঞ্চুরি। জেসন রয় আউট হলেও রানের চাকা ঠিকই সচল রাখেন বেয়ারস্টো। জয় রুটকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেই দলকে নিয়ে যায় দু’শত রানের কোটায়। দলীয় ২০৫ রানে বেয়ারস্টোর বিদায়ে ভাংগে এই জুটি। এই জুটিতে আসে ৪৫ রান। মোহাম্মদ সামির বলে রিশভ পান্তের হাতে আউট হওয়ার আগেই বেয়ারস্টো ঠিকই বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের এটা তার অষ্টম সেঞ্চুরি। আউট হওয়ার আগে বেয়ারস্টো সেঞ্চুরিসহ করেন ১১১ রান। ১০৯ বলে ১০ চার আর ৬ ছক্কায় সাজান তার ইনিংসটি। ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক ইয়ন মরগান ভালো করতে পারেননি। মাত্র এক রান করে শামির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন মরগান। ফলে ২০৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে বেন স্টেকস ও জো রুট মিলে ৭০ রানের পার্টনারশীপ গড়ে দলকে বড় স্কোরের পথে নিয়ে যায়। দলীয় ২৭৭ রানে রুট এর বিদায়ে ভাংগে এই জুটি। রুটকে হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ বানিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট নেন শামি। আউট হওয়ার আগে ৫২ বলে ২ চারে ৪৪ রান করেন রুট। রুটের বিদায়ে ব্যাট করতে নেমে ভালো করতে পারেনি জশ বাটলার। ২০ রান করা বাটলারকেও নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরে ফিরান শামি। তবে এর আগেই ইংল্যান্ড পৌছে যায় তিন’শ রানের কোটায়।

ক্রিস ওকসকে ১ রানে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেটের কোটা পূরণ করেন শামি। নিজের প্রথম দুই ম্যাচে টানা ৪ উইকেট নেওয়া শামি এবার ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে। ক্যারিয়ারে প্রথমবার নেন এক ইনিংসে ৫ উইকেট। তবে দলকে এগিয়ে নিতে টিকে থেকে স্টোকস ব্যাট চালিয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন। দলকে ৩৩৬ রানে নিয়ে আউট হন স্টোকস। জসপ্রিত বুমরাহ’র বলে আউট হওয়ার আগে ৫৪ বলে ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৬টি চার আর ৩টি ছক্কার মার। স্টোকের বিদায়ে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে করে ৩৩৭ রান।

ভারতীয় বোলারদের মধ্যে শামি ৫টি, যাদব ও বুমরাহ ১টি করে উইকেট নেন।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...