রোকনুজ্জামান মানু,পিবিএ, উলিপুর(কুড়িগ্রাম): টানা বর্ষন আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে চর ও দ্বীপচরের ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেই সাথে আগাম বন্যা পদধ্বনি দিচ্ছে। তাই উপজেলার নদীপাড়ের মানুষ আগাম বন্যা মোকাবেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জানা গেছে, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদী বেষ্টিত উলিপুর উপজেলা। নদ নদীর বন্যা কবলিত এলাকা সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ, বুড়াবুড়ি, হাতিয়া, দলদলিয়া, থেতরাই, গুনাইগাছ ও বজরাসহ ৮টি ইউনিয়নের শতাধিক চর ও প্রায় দুই শতাধিক গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ বন্যা ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব মানুষজনের পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় বন্যার সময় এক সঙ্গে অনেক ঠাসা-ঠাসি করে থাকতে হয়। কিছু সংখ্যক মানুষ বাঁধ, কলাগাছের ভেলা কিংবা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিলেও অন্যরা আশ্রয় নেয় ঘরের চালার ওপর। এসব এলাকায় বর্ষা ও বন্যা মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। তাই বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নৌকা তৈরি করা সহ মাটির তৈরি বাড়তি চুলা এবং গবাদি পশুর জন্য শুকনো খাবার সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে, ব্রহ্মপূত্র ও তিস্তা নদীর ৮টি পয়েন্টে গত এক মাসের ব্যবধানে ভাঙ্গনে প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে চলে গেছে। বন্যার আগাম পদধ্বনি পাওয়ায় নদী পাড়ের মানুষ বন্যা মোকাবেলার পূর্ব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের কামারটারী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নৌকা তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নদী পাড়ের মানুষ। এসময় কথা হয় আজগার আলীর সাথে তিনি বলেন, বন্যার সময় পরিবারের লোকজনসহ গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়। সে চিন্তা করে আগাম নৌকা তৈরি করে রাখতেছি। এসময়ের মধ্যে নদীতে মাছ ধরার কাজও করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, তার পরিবারের সদস্য ৫ জন নাতি-নাতনিসহ ১৩ জনের সংসার। বন্যার সময় এদের নিয়ে নিরাপদে স্থানে নিয়ে যাওয়া নিয়ে খুবই সমস্যা হয়। তাই নিজের পরিবার,গবাদি পশুসহ জিনিষপত্র সরানোর জন্য ওই সময় নৌকা পাওয়া যায়না। মাঝিপাড়া গ্রামের ধনেশ্বর বলেন, প্রতিবছর বন্যার সময় নিরাপদ স্থানে যাওয়া নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। তাই আগাম নৌকা বানিয়ে রাখছি। নদীতে মাছও শিকার করা যাবে।
নৌকা বানানোর কাজে নিয়োজিত কাঠমিস্ত্রি বাহাদুর মিয়া বলেন, এ বছর প্রায় ১০ টা নৌকা তৈরির কাজ নিয়েছি। প্রতিটি নৌকা তৈরি করতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এভাবেই নদী পাড়ের মানুষজন নিজ উদ্যোগে আগাম বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নদী পাড়ের এসব মানুষের দাবী সরকারী ভাবে বন্যা মোবাবেলায় নৌকা তৈরি করে দিলে ক্ষয়ক্ষতি কম হতো। তাতে মানুষের কষ্টও অনেক কমে যেত। এছাড়া বন্যার সময় রান্না করার জন্য চুলা, শুকনা খড়িসহ প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র সংগ্রহ করে রাখছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম পিবিএ’কে বলেন, উপজেলায় গুচ্ছগ্রামসহ ৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। বন্যার সময় প্রায় ৩০ হাজার বন্যা কবলিত মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের সচেতনতার ফলে তারা নৌকা তেরি করে করছেন। সরকারী ভাবে নৌকা তৈরি করা যায় কি না আগামী ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পিবিএ/আরএম/জেডআই