পিবিএ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামিদা বেগম নামে এক গৃহবধূকে নিয়ে তার দুই স্বামী ও এক প্রেমিকের মধ্যে চলছে টানাটানি। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে তাদের মাঝে চরম অসন্তোষ। চলছে নানা দেনদরবার।
বুধবার (৩ জুলাই) সন্ধ্যায় সরাইল উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানালেন হামিদার ১০ তম স্বামী সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলাম। জহিরুল ইসলাম আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘স্ত্রী হামিদাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। আমি আমার স্ত্রীকে চাই।’
জহিরুল আরো জানান, ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর ১০ লক্ষ টাকা দেনমোহরে সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের কলেজপাড়া গ্রামের বালু মিয়ার মেয়ে হামিদা বেগমের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নোটারি পাবলিকে এফিডেভিটের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। এর আগে হামিদার বিভিন্ন সময়ে ৯টি বিয়ে হয়। জহিরুলের দাবি, সবকিছু জেনেও হামিদার প্রেমে পাগল হয়ে পরিবার -পরিজন ত্যাগ করে তাকে বিয়ে করেন তিনি। তাছাড়া হামিদাকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনাই ছিল জহিরুলের উদ্দেশ্য।
দীর্ঘদিন হামিদা তার স্বামী জহিরুলের জেলা শহরের ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। তবে বহুবার অনুরোধ জানানো হলেও জহিরুলের সন্তানের মা হতে রাজি হননি হামিদা বেগম। তার প্রথম স্বামী সরাইল সদরের বড্ডাপাড়া গ্রামের প্রবাসী আলমগীর মিয়ার দু’টি কন্যা সন্তান রয়েছে। সেখানে টানা ১০ বছর সংসার করার পর দুই কন্যা সন্তান নিয়ে চলে এসে অন্যত্র বিয়ে করেন হামিদা। পরে একে একে ৮টি বিয়ে করলেও এসব স্বামীদের সন্তানের মা হননি হামিদা। সন্তান না নেওয়া এটা তার কৌশল, এসব তথ্য জানান হামিদার স্বামী জহিরুল।
জহিরুল সাংবাদিকদের জানান, তিনি চট্টগ্রামে আনসার ভিডিপিতে চাকুরি করেন। কয়েকমাস পর পর ছুটিতে স্ত্রী হামিদার কাছে আসেন। গত মে মাসে ছুটিতে এসে বাসা ভাড়া সহ হামিদার সংসার খরচের টাকা দিয়ে যান তিনি। জুন মাসের প্রথমদিকে আবারো এসে হামিদাকে সময় দিয়ে যান জহিরুল। পরে হামিদা স্বামী জহিরুলের সঙ্গে বিরূপ আচরণ শুরু করলে সন্দেহ হয় তার। চট্টগ্রাম থেকে ফিরে এসে জহিরুল দেখতে পান, বাসার সকল মালামাল নিয়ে স্ত্রী হামিদা জেলা শহরে অন্য বাসায় উঠেছেন। হামিদা সেখানে আবদুল্লাহ নামে এক যুবকের স্ত্রী পরিচয়ে দু’জনে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস শুরু করেছেন। সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি জহিরুলকে। হামিদাও তাকে স্বামী হিসেবে অস্বীকার করলেন। হামিদা ১১ তম স্বামী হিসেবে আব্দুল্লাহকে স্বীকৃতি দিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকা কাজী পাড়ার বাসিন্দা তোতা মিয়ার ছেলে মোঃ আব্দুল্লাহ (ডলি) বিয়ের কাবিননামা হাতে ধরিয়ে দিয়ে জহিরুলকে সাফ জানিয়ে দেন, এখন থেকে হামিদা আমার স্ত্রী। আমরা দু’জনে ভালোবেসে বিয়ে করেছি।
এই কাবিননামায় দেখা যায়, গত ২৩ জুন ৬ লক্ষ টাকা মোহরানায় আব্দুল্লাহ ও হামিদার বিয়ে হয়। এ কাবিনে হামিদাকে তালাকপ্রাপ্তা হিসেবে দেখিয়েছেন সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্টার কাজী মোহাম্মদ শওকত আলী।
জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি হামিদাকে তালাক দেইনি। কাজী শওকত আলী অর্থের বিনিময়ে আমার স্বাক্ষর জাল করে হামিদা ও আমার ভূয়া তালাকনামা তৈরি করেছেন। কাজী শওকত আলী হলেন হামিদার সকল অপকর্মের দালাল। এই কাজী এ পর্যন্ত হামিদার ৬টি বিয়ে পড়িয়েছেন। ৪ স্বামীর তালাক লিখেছেন। বিনিময়ে হামিদার দেনমোহর বাণিজ্যের কমিশন তিনি পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে শাহবাজপুর ইউপি নিকাহ রেজিস্টার কাজী মোহাম্মদ শওকত আলী বলেন, আমি হামিদার দু’টি বিয়ে পড়িয়েছি। জহিরুল ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হামিদাকে তালাক দিয়েছে। আমি নিজে এ তালাকের কাজ সম্পন্ন করেছি। তাদের তালাকনামা আমার কাছেই আছে। তালাকের কপি এখনো জহিরুল নেয়নি।
এদিকে জেলার সুলতানপুর এলাকার আশরাফুল ইসলাম সবুজ নামে হামিদার এক প্রেমিক, হামিদাকে পেতে নানা দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। সবুজ জানান, হামিদা ও তার মধ্যে দীর্ঘ দিনের প্রেম। তিনি হামিদাকে পেতে তার পেছনে প্রচুর টাকা ব্যয় করেছেন। হামিদা বিয়ের আশ্বাস দিয়ে সবুজের কাছ থেকে ২৭,০০০ টাকাও এনেছেন। সবুজ এখন হামিদাকে পেতে চায়।
হামিদা বেগমের কয়েকজন নিকটাত্মীয় কালীকচ্ছ এলাকার বাসিন্দা জানান, একের পর এক বিয়ে করে মোটা অঙ্কের মোহরানার টাকা আদায় করা হামিদার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। সে বহু যুবক ও প্রবাসী লোকের জীবন তছনছ করে দিয়েছে, বিয়ে নামে প্রতারণার মাধ্যমে। আর হামিদার এই অনৈতিক কাজে সরাসরি সহযোগিতা করছেন শাহবাজপুর এলাকার কাজী শওকত আলী। ওই লম্পট কাজীর সঙ্গে দুশ্চরিত্রা হামিদার অনৈতিক সম্পর্ক আছে, এমন অভিযোগ এখন সকলের মুখে মুখে। হামিদা এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে জেলা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে এই বিয়ে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হামিদা বেগম বলেন, জহিরুল আমার স্বামী ছিল আগে, এখন আমার স্বামী আব্দুল্লাহ। জহিরুলের কাছ থেকে আমি কোনোদিন সুখ পাইনি। আব্দুল্লাহ আমাকে অনেক ভালোবাসে এবং সবকিছুতে স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে। আব্দুল্লাহ’র শহরে নিজের বাড়ি আছে, এতে আমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। একাধিক বিয়ে প্রসঙ্গে হামিদা বলেন, এসব আমার ব্যক্তিগত বিষয়। জহিরুল এসব গোপন তথ্য প্রকাশ করে আমাকে ফিরে পেতে চায়। আমি তাকে (জহিরুল) সাফ জানিয়ে দিয়েছি, “তার পৈত্তিক সূূূত্রে পাওয়া দুই বিঘা জমি আমার নামে লিখে দিলে, আব্দুল্লাহকে তালাক দিয়ে তার কাছে আবার ফিরে যাবো। অন্যথায় সম্ভব নয়, কারণ আমারও ভবিষ্যৎ আছে।
পিবিএ/বাখ